কাশ্মীর সীমান্তে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। পারমাণবিক ক্ষমতাধর এই দুই প্রতিবেশী কার্যত যুদ্ধের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি)-তে গত ছয় দিন ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলছে। দুই দেশই সীমান্তে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেছে এবং কূটনীতিকদের বহিষ্কারের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে পাকিস্তান অভিমুখে অভিযানের জন্য সেনাবাহিনীকে 'পূর্ণ স্বাধীনতা' দিয়েছেন। পাকিস্তানও হামলার আশঙ্কায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশটির তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জানিয়েছেন, তাদের কাছে 'বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য' রয়েছে যে ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে হামলা করতে পারে। তিনি আরও জানান, পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। সীমান্ত এলাকায় উদ্ধার অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে বিদ্যালয়গুলোতে মহড়া চলছে। আতাউল্লাহ তারার সাংবাদিকদের বলেন, ভারত পেহেলগাম হামলার অজুহাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে চায়। তিনি ভারতের ভূমিকাকে 'বিচারক, আদালত ও জল্লাদের' মতো আখ্যায়িত করেন এবং বলেন, পাকিস্তান বহু বছর ধরে সন্ত্রাসবাদের শিকার। তিনি একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। তারার আরও বলেন, ভারতের সংঘাতের পথ বেছে নেওয়া পুরো অঞ্চলের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এদিকে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনীকে জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে 'পূর্ণ স্বাধীনতা' দিয়েছেন। গুলি বিনিময়ের ঘটনা: রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখায় উভয়পক্ষের মধ্যে ষষ্ঠ দিনের মতো গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছে, পাকিস্তানি সেনাচৌকি থেকে বিনা উসকানিতে গুলি চালানো হয়েছে। যদিও পাকিস্তান এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। তবে এএনআই সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, হটলাইনে দুই দেশের সামরিক অভিযান বিষয়ক মহাপরিচালকদের মধ্যে কথা হয়েছে এবং ভারত পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, তাদের বিমানবাহিনী ভারতের চারটি রাফায়েল যুদ্ধবিমানকে তাড়িয়ে দিয়েছে এবং এলওসিতে ভারতের গুপ্তচর ড্রোন ভূপাতিত করেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, তারা প্রথমে আক্রমণ করবে না, তবে আক্রান্ত হলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে। জাতিসংঘের আহ্বান: উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি উভয় পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন এবং প্রয়োজনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়েছে, শাহবাজ শরিফ জাতিসংঘ মহাসচিবকে দিল্লিকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানোর অনুরোধ করেছেন এবং সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের সমালোচনা করেছেন।