কুয়েটে শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশ, ভিসির পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল ক্যাম্পাস

কুয়েট প্রতিনিধি

কুয়েটে শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশ, ভিসির পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল ক্যাম্পাস

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার আবাসিক হলগুলোর তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেছেন। এর আগে, টানা দুই রাত ধরে তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

কুয়েট স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে এক দফা ঘোষণা করেন।

শিক্ষার্থীদের পক্ষে একজন ঘোষণাপত্র পাঠ করেন, তবে নিরাপত্তার কারণে তারা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ভিসি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, তিনি ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করেছেন, ইন্টারনেট ও পানি সংযোগ বন্ধ করে হল থেকে ছাত্রদের বের করে দিয়েছেন এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা ও বহিষ্কারের জন্য উৎসাহিত করেছেন। তাই, শিক্ষার্থীরা ভিসিকে অপসারণের এক দফা দাবি পেশ করেন এবং নতুন ভিসির অধীনে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ঘটনার তদন্ত চান।

ঘোষণাপত্র পাঠের পর শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে খানজাহান আলী হলের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর একে একে অন্যান্য হলের তালাও ভেঙে ফেলেন তারা।

এর আগে দুপুরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বার বাংলার পাদদেশে ‘মেক কুয়েট, ফ্রি অ্যাগেইন’ কর্মসূচির অধীনে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন এবং অবিলম্বে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবি জানান।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদল ও বহিরাগতদের হামলায় প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন, এমনকি তাদের ওপর গুলিও চালানো হয়েছিল। এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় কর্তৃপক্ষ বিচারের নামে প্রহসন করে ৪২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে এবং পরবর্তীতে ৩৭ জনকে বহিষ্কার করে। শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা আর এই ধরনের অবিচার সহ্য করবেন না।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট রাতে জরুরি সভা করে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার এবং ২ মে আবাসিক হল ও ৪ মে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। তবে শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, তাদের মূল দাবি ছিল অবিলম্বে হল খুলে দেওয়া, কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। এর ফলে তাদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে এবং হলে থাকতে না পারায় টিউশনিও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিন্ডিকেট সভায় ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন গ্রহণ করা হয়েছে এবং ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি, শিক্ষা কার্যক্রম ৪ মে থেকে এবং আবাসিক হল ২ মে থেকে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন, যার ফলস্বরূপ ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।