মে দিবস ২০২৫: শ্রমিকদের অধিকার ও বাস্তবতা

অনলাইন ডেস্ক:

মে দিবস ২০২৫: শ্রমিকদের অধিকার ও বাস্তবতা

শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন আজ। মহান মে দিবস। প্রতি বছর এই দিনটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়।

শ্রমজীবী মানুষের শ্রমে ও ঘামে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকলেও, তাদের অবদান প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়। মে দিবসের ১৪০ বছর পরেও শ্রমিকদের ভাগ্যের তেমন পরিবর্তন হয়নি। এখনো তাদের ন্যায্য মজুরির জন্য রাস্তায় নামতে হয়, মালিকের খেয়ালখুশিতে চাকরি হারাতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে মে দিবসের চেতনা এখনো শ্রমিকদের কাছে অধরা।

শ্রম বিশ্লেষকরা মনে করেন, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় আইন থাকলেও, তা মূলত তৈরি পোশাক শিল্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যান্য অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতগুলো এখনো অবহেলিত। দেশের শ্রম অর্থনীতির এই দুর্বলতা দূর করতে না পারলে, অর্থনীতি ও সমাজ দুটোই স্থবির হয়ে যেতে পারে।

এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য: ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’।

১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের আত্মত্যাগ ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করে। তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়েই সারা বিশ্বে দিনটি পালিত হয়।

মে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে গণমাধ্যমগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান ও নিবন্ধ প্রকাশ করে। দিনটি বাংলাদেশসহ প্রায় ৮০টি দেশে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। এছাড়া, অনেক দেশে বেসরকারিভাবেও এই দিবসটি উদযাপিত হয়।

মে দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই দিবসের গুরুত্ব অনেক। এর মাধ্যমে শ্রমিকদের দৈনিক কাজের সময় আট ঘণ্টায় নেমে আসে এবং তারা তাদের শ্রমের ন্যায্য মর্যাদা পেতে শুরু করে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যৌক্তিক কারণ ও শ্রম আইন মেনে শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত বা ছাঁটাই করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শিল্পাঞ্চল পুলিশ এবং বিজিএমইএ-এর ছাড়পত্র নিতে হবে। অন্যথায়, মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, মে দিবসে সব কারখানা ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। কেউ এই দিনে কারখানা খোলা রাখলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাষ্ট্রীয় পটপরিবর্তনের পর শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার জাতীয় শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। তবে এর সুপারিশ কবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বৈশ্বিক চাপের মুখে শ্রম আইন সংশোধন করা হলেও, শ্রমিকরা মালিকদের চাপে সুরক্ষা পাননি। জাতীয় শ্রম সংস্কার কমিশন ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে, যা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।

জাতীয় শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ জানান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মপরিকল্পনায় পোশাক শিল্পের পাশাপাশি অন্যান্য খাতকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।