বাজেটে কর ছাড় পুনর্বিবেচনা, বাড়তে পারে পোশাক খাতের কর

অনলাইন ডেস্ক:

বাজেটে কর ছাড় পুনর্বিবেচনা, বাড়তে পারে পোশাক খাতের কর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বেশ কিছু খাতে কর সুবিধা সংকুচিত করা হতে পারে। বিশেষ করে কৃষি, মৎস্য, পোলট্রি ও তৈরি পোশাক শিল্পের মতো খাতগুলোতে বিদ্যমান কর ছাড় পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। পাশাপাশি, ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আগামী অর্থবছরে সরকারকে অতিরিক্ত ৫৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের শর্ত দিয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআরকে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। এর অংশ হিসেবে, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কিছু কর ছাড় বাতিল বা কমানো হতে পারে।

আয়কর বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, নতুন করে কোনো খাতে কর সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই। আইএমএফ চায়, সরকার ধীরে ধীরে কর ছাড়ের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসুক। তবে দেশীয় শিল্প সুরক্ষার স্বার্থে কিছু ছাড় এখনো বহাল রাখা হতে পারে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, কৃষিপণ্য বিপণনে উৎসে কর কমানো, ভ্রমণ কর আদায়, ব্যক্তিগত করহার বৃদ্ধি এবং কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিলের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এছাড়া, কৃষি, মৎস্য ও পোলট্রি খাতে বর্তমানে যে হ্রাসকৃত করহার আছে, তা তুলে নেওয়া হতে পারে। তৈরি পোশাক খাতেও কর সুবিধা কমানোর চিন্তা ভাবনা চলছে।

বর্তমানে পোশাক শিল্পের করপোরেট কর হার ১২ শতাংশ। সবুজ কারখানার জন্য এটি ১০ শতাংশ এবং সুতা শিল্পের জন্য ১৫ শতাংশ। সুতার ওপর কর অপরিবর্তিত থাকলেও পোশাক খাতে করের হার ১৮ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এনবিআরের করনীতি বিভাগের সদস্য এ কে এম বদিউল আলম জানান, পোশাক খাত দীর্ঘদিন ধরে কর সুবিধা ভোগ করছে। অন্যান্য খাতের সঙ্গে এই খাতের কর হারের যে পার্থক্য রয়েছে, তা কমানোর বিষয়ে এনবিআর কাজ করছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

এদিকে, পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা মনে করেন, কর বাড়ানো হলে তাদের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিকেএমইএ-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাজেটে করপোরেট কর হার বাড়ানো হলে তা এই খাতের জন্য অবিচার হবে। তিনি উল্লেখ করেন, আপাতদৃষ্টিতে ১২ শতাংশ মনে হলেও তারা প্রকৃতপক্ষে আরো বেশি কর দেন। অগ্রিম কর পরিশোধের পরেও সেই টাকা ফেরত পাওয়া যায় না।

তবে অর্থনীতিবিদরা এনবিআরের এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছেন। সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান মনে করেন, করপোরেট করহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে এনবিআরের সরে আসা উচিত নয়। তিনি কর খাতের সংস্কারের ওপর জোর দেন।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, প্রান্তিক মৎস্যচাষিদের সুরক্ষার জন্য ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হতে পারে। কর্মকর্তারা আরও জানান, অনেক ক্ষেত্রে কর সুবিধার অপব্যবহার করে কালো টাকা সাদা করা হয়। তাই এসআরও বাতিলের মাধ্যমে এই ধরনের অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব।

অন্যদিকে, বিভিন্ন মহল থেকে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি করা হলেও, সরকার আপাতত এই বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আনছে না। বরং ব্যক্তি শ্রেণির ন্যূনতম কর বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা করছে। পাশাপাশি, সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা, অন্যান্য সিটি করপোরেশনে ৪ হাজার টাকা এবং সিটি করপোরেশনের বাইরে ৩ হাজার টাকা। এই কাঠামো পরিবর্তন করে সারাদেশে একই হারে ৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব বিবেচনাধীন।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, এই মুহূর্তে ন্যূনতম কর বাড়ানো উচিত নয়। এতে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে।