দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল জানান, তারা একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন এবং ধীরে ধীরে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়বে। তবে, কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মসূচি প্রণয়ন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্টের পর নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে রাজধানীতে তাৎক্ষণিক মিছিল হয়েছে। পরবর্তীতে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মীরাও মিছিলে অংশ নেন। একাধিক কর্মী জানান, এই মিছিলগুলোর সমন্বয়ের কাজটি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই করছেন। সর্বশেষ, গতকাল শুক্রবারও ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে অংশগ্রহণের অভিযোগে এর আগের দুদিনে রাজধানী থেকে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের অন্তত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০ এপ্রিল রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি জেলায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা ঝটিকা মিছিল করেন। এর আগে ১৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্না এবং ১৫ এপ্রিল রামপুরায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহার আনামের নেতৃত্বে মিছিল হয়। ৬ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের নেতৃত্বে মিছিল হয়, পরে তিনি গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। চট্টগ্রামেও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা একাধিক মিছিল করেছেন। যুবলীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন নেতা জানান, মিছিলকারীদের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নিজেই সংগঠিত করছেন এবং তারা সরাসরি তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যায়ে মিছিল করার প্রস্তুতি চলছে। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, দলের নেতৃত্ব পুনর্গঠিত হচ্ছে এবং সংগঠন গোছানোর কারণে কর্মসূচিতে কর্মীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে আরও ভালো হবে। শেখ হাসিনার নিয়মিত যোগাযোগ: আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি মতবিনিময় করেন। হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামে গ্রুপ কলের মাধ্যমে তিনি যোগাযোগ রাখছেন। এসব বৈঠক কখনো দুই-তিন ঘণ্টাব্যাপীও হয়। তিনি প্রায় প্রতিটি জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং যারা দেশে থেকে মিছিল-মিটিং করতে পারবেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। পাশাপাশি, আর্থিকভাবে সহযোগিতার চেষ্টাও করা হচ্ছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ছাত্রলীগের একজন সহ-সভাপতি জানান, ঢাকায় যারা মিছিলে আসেন, তাদের রিকশা ভাড়া দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে, সবসময় দেওয়া সম্ভব হয় না এবং বেশিরভাগ কর্মী দল ভালোবেসেই মিছিলে আসেন। বড় মিছিলের প্রত্যাশা: রাজধানীর মিছিলে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের একজন কর্মী জানান, আরও বড় কর্মসূচি হবে এবং মিছিলের আকার বাড়বে। শুরুতে যেখানে ১৫-২০ জন থাকত, এখন সেখানে প্রায় ১০০ জন অংশ নিচ্ছেন। ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা জানান, ঢাকায় মিছিল-মিটিং করতে পারবে এমন অনেক গ্রুপ আছে, যেখানে প্রতি গ্রুপে শতাধিক নেতাকর্মী রয়েছেন। আগামী মাসে ঢাকায় হাজারখানেক নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, যা তাদের অবস্থান জানান দেবে। নতুন নেতৃত্বের পরিকল্পনা নেই: দেশের রাজনীতিতে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নিয়ে আলোচনা চলছে। নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির কয়েকজন নেতার বক্তব্যে এ নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো ভালো ভাবমূর্তির নেতাদের দলের দায়িত্বে আনা হতে পারে। তবে, আওয়ামী লীগের নেতারা এটিকে দল ভাঙার ষড়যন্ত্র বলছেন। তাদের মতে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শেখ হাসিনার হাতেই থাকবে এবং নিচের দিকেও কোনো পরিবর্তন আনা হবে না। মোহাম্মদ আলী আরাফাত জানান, শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং তিনিই নেতৃত্ব দেবেন। দলের অন্য নেতারাও নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছেন। মহানগর পর্যায়ের একজন নেতা জানান, টেলিগ্রাম গ্রুপের আলোচনায় শেখ হাসিনার কাছে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের অনুরোধ করা হয়েছিল। জবাবে তিনি বলেন, এখন কাউকে দলীয় পদে দায়িত্ব দিলে, সে জেলে পচে মরবে। নেতাকর্মীরা এখন লুকিয়ে থাকতে পারলেও, তখন সেই সুযোগ থাকবে না। শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ভেতরে যারা সাহস নিয়ে দলকে সংগঠিত করার কাজে নেতৃত্ব দেবেন, তারাই হবেন নেতা। নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে দেশের ভেতরে থাকা নেতাদের মধ্যে কাউকে মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা চলছে। তবে, গ্রেপ্তার ও মামলার আশঙ্কায় আপাতত সেই পথে হাঁটছে না দলটি। দলের দাবি, ঢাকা থেকে গ্রাম পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, দেশে যারা আছেন, তাদের মধ্য থেকে কেউ মুখপাত্র হবেন কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়। পরিবেশ তৈরি হলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে, তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।