ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথা জানালেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি, কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে তিনি দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধ থামিয়েছেন। তবে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে কোনো সংঘাতে তারা 'পারমাণবিক ব্ল্যাকমেল' সহ্য করবেন না। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি মনে করেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশ দুটির মধ্যে শান্তি আনা সম্ভব। ট্রাম্পের ভাষ্য, 'আমরা একটি পারমাণবিক সংঘাত থামিয়েছি। আমার মনে হয়, এটি ভয়াবহ রূপ নিতে পারত এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যেত।' তিনি আরও বলেন, আলোচনা অব্যাহত থাকলে যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য বাড়াতে প্রস্তুত। 'আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে প্রচুর ব্যবসা করব, ভারতের সঙ্গেও। খুব শীঘ্রই পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করব,' যোগ করেন তিনি। নিজের প্রশাসনের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, 'আমার প্রশাসন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্রুত যুদ্ধবিরতি স্থাপনে সহায়তা করেছে। দেশ দুটির কাছে প্রচুর পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।' বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই দাবি এটাই প্রমাণ করে যে, ওই সময়ে সংঘাতের ঝুঁকি কতটা বেশি ছিল। উত্তেজনা কমাতে দুই দেশের নেতাদের ভূমিকার প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, 'আমি জানাতে পেরে গর্বিত যে, ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্ব দৃঢ় ও শক্তিশালী ছিল। তারা পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তা দেখিয়েছেন।' অর্থনৈতিক প্রণোদনা ব্যবহার করে কীভাবে উভয় পক্ষকে শান্ত করেছেন, সে বিষয়েও ধারণা দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, 'আমরা অনেক সাহায্য করেছি এবং বাণিজ্যেও সহায়তা করেছি। আমি বলেছিলাম, চলুন, আমরা আপনাদের সঙ্গে প্রচুর ব্যবসা করব। এটা বন্ধ করুন। যদি আপনারা এটা বন্ধ করেন, তাহলে আমরা ব্যবসা করব। বাণিজ্যকে আমি যেভাবে ব্যবহার করেছি, আগে কেউ করেনি।' অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, ভবিষ্যতে কোনো সন্ত্রাসী হামলা হলে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ভবিষ্যতে উসকানি দেওয়া হলে ভারত 'পারমাণবিক ব্ল্যাকমেলের' কাছে নতি স্বীকার করবে না। মোদি বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য না করে উল্টো ভারতের ওপর হামলা চালিয়েছে। তিনি আরও বলেন, 'ভারতের বিরুদ্ধে আরেকটি সন্ত্রাসী হামলা হলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে। সন্ত্রাসবাদ ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না, পানি ও রক্ত একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না।' ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আরও ইঙ্গিত দেন যে, যুদ্ধবিরতি কার্যকরে বিদেশি মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা কমানো হবে। তিনি বলেন, 'আমরা পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ও সামরিক ঘাঁটিতে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ স্থগিত করেছি। আগামী দিনে পাকিস্তান কী মনোভাব গ্রহণ করে, তার ভিত্তিতে আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ হিসাব করব।' এদিকে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, ভারতের সঙ্গে ভবিষ্যতে যেকোনো আলোচনায় কাশ্মীর, সন্ত্রাসবাদ ও পানি—এই তিনটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ভারতের অহংকারের কারণেই বিষয়গুলো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। জাতিসংঘের প্রস্তাবের অধীনে কাশ্মীরের সমাধান সম্ভব, কিন্তু ভারতের একগুঁয়েমিই বাধা। খাজা আসিফ আরও বলেন, সন্ত্রাসবাদ পাকিস্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে। তিনি অভিযোগ করেন, ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং পাকিস্তানের পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সংঘাতের সময়ে বিশ্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রস্তুতি ও দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি দেখেছে।