‘নরকতুল্য’ গাজা: খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তাহীনতায় ধুঁকছে একটি জনপদ

চব্বিশের বার্তা অনলাইন:

‘নরকতুল্য’ গাজা: খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তাহীনতায় ধুঁকছে একটি জনপদ

গাজাবাসীর জীবনে যেন দুনিয়াতে থাকা অবস্থায়ই নরক নেমে এসেছে। একের পর এক হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, প্রয়োজনীয় পণ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র অভাবে এলাকা পরিণত হয়েছে মানবিক সংকটের চরম পর্যায়ে। ইসরায়েল ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

এই অবস্থায় রেড ক্রসের প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলজারিক গতকাল শুক্রবার গাজার পরিস্থিতিকে ‘নরকতুল্য’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির সদর দপ্তরে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আমরা এখন এমন এক পরিস্থিতিতে নিজেদের খুঁজে পাচ্ছি যেটিকে আমি নরকতুল্য বলে বর্ণনা করতে বাধ্য হচ্ছি। অনেক অংশে মানুষের পানি, বিদ্যুৎ, খাবারের অভাব রয়েছে।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, রেড ক্রসের ফিল্ড হাসপাতালগুলো আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সরবরাহ শেষ হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও জানায়, অ্যান্টিবায়োটিক এবং রক্তের ব্যাগের মজুত দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। জেরুজালেম থেকে ভিডিও লিংকে দেওয়া এক বক্তব্যে ডব্লিউএইচও-র ড. রিক পিপারকর্ন জানান, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ২২টি বর্তমানে ন্যূনতমভাবে কার্যকর রয়েছে।

যুদ্ধবিরতি ব্যর্থ, বন্ধ ত্রাণ প্রবেশ

ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। এর আগে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির সময় প্রায় ২৫ হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করলেও, পরবর্তীতে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় নতুন কোনো মানবিক সহায়তা প্রবেশ করেনি। ইসরায়েল দাবি করেছে, ওই সহায়তা হামাস তাদের যুদ্ধযন্ত্র পুনর্গঠনে ব্যবহার করেছে, যদিও হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মানবিক কর্মীদের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ

মানবিক সহায়তা কর্মীদের জন্যও গাজা এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা হয়ে উঠেছে। মার্চ মাসে দক্ষিণ গাজায় একটি গণকবরে পাওয়া গেছে ১৫ জন জরুরি ও ত্রাণ কর্মীর মরদেহ, যাদের মধ্যে ৮ জন ছিলেন ফিলিস্তিনি কর্মী। জাতিসংঘ ও রেড ক্রিসেন্ট ইসরায়েলি বাহিনীকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করলেও, ইসরায়েল দাবি করেছে তারা হামাস সদস্যদের উপস্থিতির আশঙ্কায় হামলা চালায়।

মানবতার পক্ষে যুদ্ধবিরতির ডাক

স্পোলজারিক বলেন, “জনগণের চলাচলের জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক, তবে আমাদের কাজ করার জন্যও এটি বিশেষভাবে বিপজ্জনক।” তিনি হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজার মানবিক সংকট সমাধানে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৮০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং গাজার অধিকাংশ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।