বিএনপিতে কি বাড়ছে দলীয় কোন্দল? ৮ মাসে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক:

বিএনপিতে কি বাড়ছে দলীয় কোন্দল? ৮ মাসে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর মৃত্যু

বিএনপিতে কি বাড়ছে দলীয় কোন্দল? গত আট মাসে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর মৃত্যু ঘিরে এমন প্রশ্ন উঠেছে। দলের অভ্যন্তরের দ্বন্দ্বের কারণে তৃণমূলে সংঘাত বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই সংঘাতগুলো ঘটছে। নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ৫ই অগাস্টের পর থেকে বিএনপির তৃণমূলে রাজনৈতিক অন্তর্কোন্দল দৃশ্যমান হয়েছে। প্রায়ই সংঘাত-সহিংসতার খবর গণমাধ্যমে আসছে। এমনকি শুধু এপ্রিল মাসেই দলের অন্তত সাতজন নেতাকর্মীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত এই সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতারাও সংঘাতের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তাদের দাবি, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে সহিংসতার মাত্রা কমে এসেছে।

যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে সহিংসতার মাত্রা কমার কথা বলা হচ্ছে, তবে মাঠের চিত্র ভিন্ন। রংপুরের বদরগঞ্জে গত ৫ই এপ্রিল বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে লাভলু মিয়া নামের এক কর্মী নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত লাভলুর ছেলে রায়হান কবির ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ১৫০ জনের নামে মামলা করেন। তার অভিযোগ, অভিযুক্তরা টাকার জোরে জামিন নিয়েছেন।

রায়হান কবির বলেন, ‘আমার বাবা বিএনপির একজন নিবেদিত কর্মী ছিলেন। তিনি দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। অথচ আজ দলের নেতারা নীরব।’

এদিকে, গাজীপুরের ধীরাশ্রমে ১১ই এপ্রিল কৃষকদল নেতা রাকিব মোল্লাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, এবং এর সাথে জড়িতরা বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত।

নিহত রাকিবের মা রুবিনা আক্তার সীমা বলেন, ‘রাকিব যে অবস্থানে যেতে পারত, অন্যরা সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারবে না, তাই তাকে খুন করা হয়েছে। বিএনপির কিছু লোক এই মামলার অগ্রগতি চায় না। তারা বলছে, বিএনপির লোক জড়িত থাকলে মামলা দুর্বল হয়ে যাবে। দলের জন্য অপরাধ করলে কি ক্ষমা পাওয়া যায়?’

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় ৩৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৬ জনই বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মারা গেছেন। গত আট মাসে (অগাস্ট থেকে মার্চ) ৭৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫৮ জন বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সংঘাত-সহিংসতা হচ্ছে, তবে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জড়িতদের বহিষ্কার ও শোকজ করা হয়েছে। তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।’

তিনি আরও জানান, অভিযোগ প্রমাণিত হলে জেলা বা থানা কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি করা হচ্ছে এবং প্রায় তিন থেকে চার হাজার নেতাকর্মীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। রিজভীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হওয়ার কারণে এমন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা, নেতৃত্ব সংকট এবং দলীয় চেয়ারপারসনের নিষ্ক্রিয়তা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণ। নির্বাচন এগিয়ে এলে এই সংকট আরও বাড়বে।

আরেক বিশ্লেষক কাজী মারুফুল ইসলাম মনে করেন, দলের ভেতরের এই সংঘাতের পেছনে অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং আধিপত্য বিস্তারের বিষয় জড়িত। তিনি বলেন, ‘সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সরকার, জাতীয় নির্বাচন এবং দলের ভেতরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য আধিপত্যের লড়াই চলছে।’