গ্যাস সংকটে শিল্পখাত: বিদ্যুৎ উৎপাদনে অগ্রাধিকার, শিল্পে হাহাকার

অনলাইন ডেস্ক:

গ্যাস সংকটে শিল্পখাত: বিদ্যুৎ উৎপাদনে অগ্রাধিকার, শিল্পে হাহাকার

 শিল্পখাতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেওয়ায় শিল্পকারখানা, বাসাবাড়ি ও সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ, কোথাও উৎপাদন ক্ষমতা কমে এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ায় লোডশেডিং কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকায় এই সংকট আরও তীব্র হতে পারে।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট, বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৭০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে প্রায় ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে শিল্পকারখানা, বাসাবাড়ি ও সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে।

ঢাকার সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সংকট চরমে। রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস কারখানাগুলো অর্ডার ধরে রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে। সিরামিক, ইস্পাত, রি-রোলিং মিল ও টেক্সটাইল খাতেও উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ জানান, তাদের দৈনিক চাহিদা ১৯০ কোটি ঘনফুট, কিন্তু পাচ্ছে ১৫০ কোটি ঘনফুট। এর বড় অংশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে যাওয়ায় শিল্পকারখানায় চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলএনজি আমদানি করে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে জোর দেওয়া উচিত। ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, আগে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে যথেষ্ট চেষ্টা করা হয়নি। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে দেশের অর্থনীতি বড় বিপদে পড়বে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) প্রকৌশলীরা জানান, এপ্রিলের শেষ দিকে বিদ্যুতের গড় চাহিদা ছিল ১৪,০০০-১৪,৫০০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন ঘাটতির কারণে দৈনিক প্রায় ১,৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে দৈনিক ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময় দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন ছিল দৈনিক ১৭৪ কোটি ঘনফুট, যা পরবর্তীতে ২৭০ কোটি ঘনফুটে উন্নীত হয়। এরপর সরকার এলএনজি আমদানির দিকে মনোযোগ দেয়। বর্তমানে দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিলে দৈনিক ৩১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে, যার মধ্যে ১০০ কোটি ঘনফুট ছিল এলএনজি। ২৮ এপ্রিল সরবরাহ করা হয় ২৭০ কোটি ঘনফুট, যার পুরোটাই দেশীয় গ্যাস। বর্তমানে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন দৈনিক ১৭০ কোটি ঘনফুট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন সময়সাপেক্ষ। পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, দেশের স্থলভাগে বড় গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই বিকল্প উৎস অনুসন্ধানের উপর জোর দেওয়া উচিত। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার পায়রা ও মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তি বাতিল করে দেয় এবং ডিপ ড্রিলিং থেকেও সরে আসে।