সরকারকে চাপে রাখতে বিএনপি তাদের কর্মীদের মাঠে নামানোর কৌশল নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে দলটির তিনটি অঙ্গসংগঠন দেশব্যাপী বিভাগীয় পর্যায়ে সেমিনার ও সমাবেশের আয়োজন করবে। বিএনপি মনে করছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়া এবং নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তরুণ প্রজন্ম ও নতুন ভোটাররা আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই, দলটি তরুণদের কাছে টানার জন্য এই কর্মসূচি নিয়েছে। সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। যুবদল সভাপতি জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় তরুণদের ক্ষমতায়ন, রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ, সৃজনশীলতার বিকাশ এবং তৃণমূল উন্নয়নে বাস্তবসম্মত মডেল গড়তে এই কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে দুই দিনের কর্মসূচি থাকবে। প্রথম দিনে ‘তারুণ্যের ভবিষ্যৎ ভাবনা, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনার হবে। যেখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার তরুণ প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, চিন্তাবিদ, বক্তা ও উদ্যোক্তারা অংশ নেবেন। সেমিনারে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবেশ, নগরায়ণ, প্রযুক্তি, রাজনৈতিক অধিকার ও তারুণ্যের ক্ষমতায়ন নিয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়াও, বিএনপি ও মিত্র দলগুলোর ৩১ দফা রূপরেখা নিয়ে কথা হবে। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন ‘তরুণদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মহাসমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হবে। এর উদ্দেশ্য হলো তরুণদের ঐক্য, প্রত্যয় ও প্রত্যাশাকে তুলে ধরা। দেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে এই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। প্রথম কর্মসূচি ৯-১০ মে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিভাগে, দ্বিতীয় কর্মসূচি ১৬-১৭ মে খুলনা ও বরিশাল বিভাগে, তৃতীয় কর্মসূচি ২৩ মে বগুড়ায় এবং ২৪ মে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ কর্মসূচি ২৭-২৮ মে ঢাকা, ফরিদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বিএনপি সংস্কার চায় না, এমন প্রচার আছে। তাই, বিএনপি আসলে কী চায়, তা জানানোর পাশাপাশি দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সংস্কার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে। বিএনপি চায়, দলগুলো যেসব বিষয়ে একমত, তা বাস্তবায়নের জন্য ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হোক। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ঐকমত্যের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচন করা যেতে পারে। এর বাইরে কিছু করতে হলে জনগণের ম্যান্ডেট লাগবে। বিএনপির নেতারা ডিসেম্বরের ভোটের জন্য একটি পথনকশার (Roadmap) জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কয়েকবার দেখা করেছেন। কিন্তু সরকার কোনো সুনির্দিষ্ট পথনকশা দেয়নি। আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনো তাদের জন্য ভালো সমাধান। এ বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে, কোনো ‘মহামানব’ তৈরির জন্য নয়।