নির্বাচন কমিশন (ইসি) বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার মাধ্যমে নতুন যুক্ত হওয়া ভোটারদের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। ভোটার তালিকা আইন ও বিধিমালা সংশোধনের এই প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। প্রস্তাবটি শীঘ্রই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সংশোধনীতে বিদ্যমান খসড়া ভোটার তালিকা ২ জানুয়ারি এবং চূড়ান্ত তালিকা ২ মার্চ প্রকাশের পাশাপাশি, কমিশনকে যেকোনো সময় হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশের ক্ষমতা দেওয়া হবে। এর ফলে, তালিকায় নতুন যুক্ত হওয়া ৪৩ লাখ ২৭ হাজারের বেশি তরুণ ভোটার আসন্ন নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। নির্বাচন যত পেছাবে, এই সংখ্যা আরও বাড়বে। আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রস্তাব পেলে তারা বিষয়টি বিবেচনা করবে, তবে সিদ্ধান্ত কমিশনকেই নিতে হবে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মনে করেন, সরকার নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখবে। ডিসেম্বরে ভোটগ্রহণের লক্ষ্য নিয়ে ইসি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। হালনাগাদ কার্যক্রমে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮৬৬ জন নতুন ভোটার নিবন্ধিত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৩ লাখ ২৭ হাজার জনের জন্ম ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারির আগে, অর্থাৎ তারা ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের। ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান আইনে ২ জানুয়ারি খসড়া এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর আগে নির্বাচন হলে নতুন ভোটাররা ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। তাই আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আইন সংস্কার সংক্রান্ত কমিটি ভোটার তালিকা আইনের ৩-এর দফা ‘জ’ এবং ১১(১) ধারায় সংশোধনী প্রস্তাব করেছে। সংশোধনীতে ‘কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত তারিখ’ প্রতিস্থাপন এবং ‘অথবা কমিশন কর্তৃক স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত’ শব্দগুলো যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই সংশোধনী পাশ হলে সংসদ নির্বাচনের আগে যাদের বয়স ১৮ বছর হবে, তারাও ভোট দিতে পারবেন। ইসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ভোটারের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ তরুণ, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৯ বছর। নতুন করে সক্রিয় চাঁদাবাজ-দখলবাজরা টঙ্গীতে সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি এবং গার্মেন্টের ঝুট ব্যবসায় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকা চাঁদাবাজ ও দখলবাজরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে নতুন করে দুর্বৃত্তায়ন শুরু হয়েছে, যেখানে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মী এবং সুবিধাভোগীরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, খাসজমি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ঝুট ব্যবসা, ফুটপাত, ড্রেন—সবকিছু দখলের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। অবৈধ দোকানপাট থেকে মাসে সাড়ে চার কোটি টাকা এবং ঝুট ব্যবসা থেকে অন্তত শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আগে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা এসব নিয়ন্ত্রণ করলেও এখন বিএনপি-সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রভাবশালীরা এর নিয়ন্ত্রণ করছেন। সড়ক, মহাসড়ক ও ফুটপাতের জায়গা দখল করে কয়েক হাজার দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে, যেখান থেকে দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া, মোটা অঙ্কের টাকায় পজিশন বিক্রি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। টঙ্গীতে অবস্থিত তিন শতাধিক শিল্পকারখানার ঝুট ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ব্যবসায়ীরা জানান, সরাসরি বিক্রি করতে পারলে যে ঝুট থেকে ৫০ লাখ টাকা পাওয়া যেত, সেটি এখন প্রভাবশালীদের কাছে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে হয়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের নাম ভাঙিয়ে তার পিএস কিবরিয়া খান জনি ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আধিপত্য বিস্তার করছেন। যদিও জনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপির সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, তিনি সরাসরি ঝুট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত না থাকলেও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে দিয়েছেন। টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ সুমন জানান, কারখানার ঝুটের ২০ শতাংশ ব্যবসা তাদের লোকজন এবং বাকি ৮০ শতাংশ আওয়ামী লীগের দোসরদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দখলবাজির চিত্র : টঙ্গীর তালতলা রোড, মেঘনা বটতলা রোড, সোনালী ট্যোবাকো রোড, ন্যাশনাল টিউবস রোড, টঙ্গীবাজার মিতালী পাম্পের দক্ষিণে মহাসড়কের পাশে কাপড়ের বাজার, টঙ্গীবাজার সংলগ্ন তুরাগ নদের তীর, হাজী মার্কেট, মিলগেট, দত্তপাড়া, আউচপাড়া, এরশাদনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও মহাসড়কের জমি দখল করে প্রায় ৪ হাজার ছোট-বড় দোকান তৈরি করা হয়েছে, যেখান থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। মেঘনা বটতলা এলাকায় সড়কের পাশে অবৈধভাবে জমি দখল করে ঝুটের গোডাউন তৈরি করা হয়েছে। ফুটপাতের চাঁদাবাজি ও ময়লা বাণিজ্যেও হাতবদল হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সাবেক দুই কাউন্সিলরসহ বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় সরকারি জমিতে ১১টি টিনশেড দোকানঘর নির্মাণ করে বিক্রি করেছেন, যা প্রতিটি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড মেঘনা বটতলা রোডে এবং পাশের আরও একটি সড়কে প্রায় ৬০টি স্থাপনা নির্মাণ করে ঝুটের গুদাম হিসাবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে, যেখান থেকে প্রতি মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। টঙ্গী-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দুইপাশের ফুটপাত দখল করে কয়েক শ দোকান বসিয়ে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া, সুলতান মার্কেটের সামনে থেকে আব্দুল্লাহপুর ব্রিজ পর্যন্ত সরকারি জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ৪ শতাধিক দোকান, যেখান থেকে প্রতি দোকানে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। টঙ্গী স্টেশনরোড ও মিলগেট এলাকার সুন্দর আলী সড়কে পার্কিং করা কাভার্ডভ্যান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। রাজউকের উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, টঙ্গী শিল্পাঞ্চল এলাকায় রাজউকের প্লটে অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান চলছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকতা মো. জহিরুল ইসলাম জানান, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সিটি করপোরেশনের অভিযান চলমান রয়েছে।