রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ৪২৬ জন ‘সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা’ নিয়োগ দিয়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, তাঁদের বেশিরভাগই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে নেমেছেন, ফলে তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নন। ডিএমপি সদর দপ্তর জানিয়েছে, যদিও সব সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয়নি, তবে তাঁদের নিজ নিজ থানার মাধ্যমে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। থানা-পুলিশ এ বিষয়ে তাঁদের নির্দেশনা প্রদান করবে। ডিএমপির কর্মকর্তারা বলছেন, এই সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তারা মূলত ‘পুলিশের চোখ’ হিসেবে কাজ করবেন। প্রাথমিকভাবে, ঈদ উপলক্ষে শপিং মল ও বাজারের ভিড় সামলাতে তাঁদের মোতায়েন করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাঁদের বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকাগুলোতেও দায়িত্ব দেওয়া হবে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন পুলিশ ইউনিট রাজধানীতে অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে। এই ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ তাদের সহায়তা করবে এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে পুলিশকে সহযোগিতা করাই হবে তাদের প্রধান কাজ। ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, গত মার্চ মাসে আদাবর ও ক্যান্টনমেন্ট থানা ব্যতীত অন্য ৪৮টি থানায় এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতি থানায় গড়ে ৮-১০ জন, আবার কোনো কোনো থানায় এর চেয়ে বেশিও নিয়োগ পেয়েছেন। প্রত্যেককে ডিএমপির লোগো সম্বলিত আর্মব্যান্ড, ‘সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা’ লেখা পরিচয়পত্র এবং ডিএমপি প্রধানের স্বাক্ষর করা নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। নিয়োগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, এই কর্মকর্তারা একজন পুলিশ কর্মকর্তার মতোই ক্ষমতা, দায়মুক্তি, কর্তব্য ও আইনি সুরক্ষা ভোগ করবেন। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, পুলিশের জনবল সংকট থাকায় ঈদুল ফিতরের আগে বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীদের এই ‘অক্সিলিয়ারি ফোর্স’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬-এর ১০ ধারা অনুযায়ী এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের অধিকাংশই নিরাপত্তা কর্মী, যারা তাদের নিজ নিজ এলাকায় পুলিশের সহযোগী হিসেবে কাজ করবেন। তবে বাস্তবতা হলো, মাঠপর্যায়ে কর্মরত অনেক সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ পাননি। নিয়োগপত্রে সুযোগ-সুবিধা ও দায়িত্বের কথা উল্লেখ থাকলেও, তাঁরা এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানেন না। এমনকি তাঁদের চাকরির মেয়াদ এবং বেতন সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই। কয়েকজনের কাছে আর্মব্যান্ডও দেখা যায়নি। বঙ্গবাজারের বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সের নিরাপত্তাকর্মী অক্ষয় চন্দ্র রায় জানান, রমজানের শুরুতে পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁর নাম, নম্বর ও ছবি নিয়ে যান এবং পরে একটি আর্মব্যান্ড ও পরিচয়পত্র দিয়ে যান। দায়িত্ব পালনের বিষয়ে তেমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। পাশের এনেক্স টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী মো. ফারুক হোসেনও একই কথা জানান। দারুস সালাম থানাধীন মিরপুর মাজার কো-অপারেটিভের নিরাপত্তাকর্মী মহিদুল ইসলাম বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হলেও, কত দিনের জন্য বা কী কী সুবিধা তিনি পাবেন, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। ডিএমপির একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রশিক্ষণ দেওয়া না হলেও কিছু থানা থেকে মৌখিকভাবে সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। শাহ আলী থানাধীন মিরপুর-১ নম্বরের রূপায়ণ টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী সেকান্দার আলী জানান, পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের মার্কেটে এসে কোনো ঘটনা ঘটলে জানানোর কথা বলেছেন এবং প্রয়োজনে অপরাধীকে আটক করে পুলিশকে খবর দিতে বলেছেন। রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক জানান, তাঁর থানা এলাকায় ১৭ জন নিরাপত্তাকর্মীকে সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।