বার্ড ফ্লু ঝুঁকিতে পোলট্রি খাত, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হচ্ছে মুরগি

অনলাইন ডেস্ক:

বার্ড ফ্লু ঝুঁকিতে পোলট্রি খাত, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হচ্ছে মুরগি

বার্ড ফ্লু (এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা) সংক্রমণের ঝুঁকি সত্ত্বেও পোলট্রি শিল্পের জন্য বিতর্কিত একটি পদক্ষেপ নিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে একদিন বয়সী হাই-লাইন ব্রাউন জাতের মুরগির বাচ্চা আমদানির অনুমতি দিয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, যে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বার্ড ফ্লুর প্রকোপে বিপর্যস্ত।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চা আমদানি করার ফলে দেশের পোলট্রি খাতে মারাত্মক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বার্ড ফ্লুর কারণে কোটি কোটি মুরগি নিধন করছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া ২৭ এপ্রিলের অনুমতিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে ১০ হাজার ৯৬০টি মুরগির বাচ্চা আকাশপথে আমদানি করা হবে। ৪ মে মুরগির বাচ্চাগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কাজী ফার্মস লিমিটেড।

তবে, এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া কিছু শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, বার্ড ফ্লু আক্রান্ত দেশ থেকে ট্রানজিট গ্রহণ করা যাবে না এবং রপ্তানিকারক দেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেলে আমদানির অনুমোদন বাতিল বলে গণ্য হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ চললেও এই শর্ত উপেক্ষা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে পোলট্রি শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এমন পরিস্থিতিতে সেখান থেকে বাচ্চা আমদানি করা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। এর ফলে বাংলাদেশেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ১৪ মে পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ১৭ কোটি হাঁস-মুরগি বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে। এ কারণে ডিমের সংকট দেখা দিয়েছে এবং ৭০ জন মানুষও আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন।

কাজী ফার্মসের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনেই প্যারেন্ট বাচ্চা আমদানি করা হয়েছে এবং রপ্তানিকারক দেশের পশুচিকিৎসকের কাছ থেকে বার্ড ফ্লু-মুক্ত সনদ নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান জানান, বার্ড ফ্লু আক্রান্ত দেশ থেকে মুরগির বাচ্চা আমদানিতে ঝুঁকি থাকলেও, আমদানিকারক কোম্পানিকে ওই দেশের ইনফ্লুয়েঞ্জামুক্ত খামার থেকে বাচ্চা আনার কথা বলা হয়েছে এবং ভেটেরিনারিয়ানের সার্টিফিকেটও চাওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে প্রথম বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয় ২০০৭ সালে। এরপর ২০১৩, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে বিভিন্ন মাত্রায় এর প্রকোপ দেখা যায়।