মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার উদ্দেশ্যে অর্থ সংগ্রহের জন্য নিজের বাবা-মাকে খুন করার কথা স্বীকার করেছে উইসকনসিনের এক কিশোর। ১৭ বছর বয়সী নিকিতা ক্যাসাপ নামের ওই কিশোরের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সম্প্রতি ফেডারেল ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। ওয়ারেন্টে বলা হয়েছে, নিকিতা শুধু তার বাবা-মাকে খুনই করেনি, বরং সে দেশের সরকারের পতন ঘটানোরও পরিকল্পনা করেছিল। ওয়াউকেশা কাউন্টি কর্তৃপক্ষ গত মাসে নিকিতার বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যাকাণ্ড, চুরি ও অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ এনেছে। ফেব্রুয়ারিতে মিলওয়াকির বাইরে নিজ বাড়িতে নিকিতা তার মা তাতিয়ানা ক্যাসাপ ও সৎ বাবা ডোনাল্ড মেয়ারকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর সে নগদ ১৪ হাজার ডলার, পাসপোর্ট ও তাদের পালিত কুকুর নিয়ে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারের আগে সে কয়েক সপ্তাহ ধরে তার বাবা-মায়ের মৃতদেহের সঙ্গে একই বাড়িতে ছিল। পরে কানসাস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১০ লাখ ডলার বন্ডে ওয়াউকেশা কাউন্টি জেলে আটক ক্যাসাপকে শীঘ্রই আদালতে হাজির করা হবে। কাউন্টি প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, ফেডারেল অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিচার হবে। এফবিআই-এর পরোয়ানায় বলা হয়েছে, নিকিতা তার বাবা-মাকে হত্যার পরিকল্পনা করে, ড্রোন ও বিস্ফোরক কেনে এবং একজন রুশ ভাষাভাষীসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে তার পরিকল্পনা শেয়ার করে। আদালতের নথিতে আরও বলা হয়েছে, অ্যাডলফ হিটলারের প্রশংসামূলক তিন পৃষ্ঠার একটি ইহুদি-বিদ্বেষী ইশতেহারে নিকিতা তার উদ্দেশ্য বিশদভাবে বর্ণনা করেছে। মিলওয়াকির ফেডারেল আদালত থেকে জারি করা পরোয়ানায় টিকটক ও টেলিগ্রাম মেসেঞ্জার অ্যাপে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে তার যোগাযোগের তথ্যও পাওয়া গেছে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ক্যাসাপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে হত্যার আহ্বান জানিয়ে একটি ইশতেহার লিখেছিল। সে প্রেসিডেন্টকে হত্যা ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতেই সে তার বাবা-মাকে হত্যা করে। প্রসিকিউটররা আরও জানান, ক্যাসাপ এমন একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, যে রুশ ভাষায় কথা বলে এবং ইউক্রেনে পালানোর একটি পরিকল্পনা তার সঙ্গে শেয়ার করেছিল। কানসাসে গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে টাকা, পাসপোর্ট, একটি গাড়ি ও পালিত কুকুর উদ্ধার করা হয়। ফেডারেল প্রসিকিউটররা জানান, ক্যাসাপের ইশতেহারে ট্রাম্পকে হত্যার কারণ ও ইউক্রেনে স্থায়ী হওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত লেখা ছিল। ফেডারেল ওয়ারেন্টে ক্যাসাপের লেখা থেকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ওই কিশোর ‘প্রেসিডেন্ট ও সম্ভবত ভাইস প্রেসিডেন্টকেও সরিয়ে সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল।’ বার্তা সংস্থা এপি ক্যাসাপের আইনজীবী নিকোল ওস্ট্রোভস্কির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। কর্মকর্তারা জানান, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নিকিতা ক্যাসাপের মা ৩৫ বছর বয়সী তাতিয়ানা ক্যাসাপ ও ৫১ বছর বয়সী ডোনাল্ড মেয়ারের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মেয়ার কাজে না যাওয়ায় ও নিকিতা ক্যাসাপ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে স্কুলে অনুপস্থিত থাকায় পরিবারের সদস্যরা তাদের খোঁজ নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, মরদেহ উদ্ধারের কয়েক সপ্তাহ আগে নিকিতা তার বাবা-মাকে হত্যা করেছে। প্রসিকিউটররা আদালতকে জানিয়েছেন, দম্পতির মৃতদেহ এতটাই পচে গিয়েছিল যে তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে দাঁতের রেকর্ড ব্যবহার করতে হয়েছিল।