পতনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে বৃহস্পতিবার দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থান দেখা গেছে। আগের কার্যদিবসে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রভাবে বড় দরপতন হলেও সপ্তাহের শেষ দিনে বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যদিও সূচকের আগের দিনের পুরো ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক প্রায় ১০০ পয়েন্ট, যা ২ শতাংশের বেশি, বৃদ্ধি পায়। বুধবার ডিএসইতে সূচকের পতন হয়েছিল প্রায় ১৫০ পয়েন্ট বা ৩ শতাংশ। শেয়ারবাজারে এই আকস্মিক উত্থানের কারণ নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে। বাজার সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের মাত্রা বৃদ্ধি না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। ফলে, শেয়ার বিক্রির চাপ কমে কেনার আগ্রহ বেড়েছে। তবে কিছু বাজার বিশ্লেষক মনে করেন, প্রতিবেশী দুই দেশের সংঘাতের সঙ্গে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। বরং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা বিরাজ করায় বাজারে দরপতন দেখা যায়। তাদের মতে, বৃহস্পতিবারের সূচকের উল্লম্ফনের পেছনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের আসন্ন বৈঠকের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। আগামী রোববার (১১ মে) ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই বৈঠক করবেন, এমন খবরে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনতে উৎসাহিত হয়েছেন। অনেকে এই উত্থানকে ‘কাউন্টার মুভ’ হিসেবে অভিহিত করছেন। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ কোম্পানি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, “গতকাল পুঁজিবাজারে যে পতন হয়েছে, তা মূলত ইমোশনাল কারণে। বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তবে, তারা এখন সেই ভুল বুঝতে পেরেছেন।” ব্রোকারেজ হাউস ট্রেজার সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ এই দিনের পরিবর্তনকে ‘কাউন্টার মুভ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। শেয়ারবাজারে ‘কাউন্টার মুভ’ হলো প্রধান প্রবণতার বিপরীতে সাময়িক দর পরিবর্তন। শেয়ারের দাম বাড়তে থাকলে মাঝে মধ্যে দাম কমে যাওয়া অথবা কমতে থাকলে দাম বেড়ে যাওয়াকে কাউন্টার মুভ বলা হয়। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো খবর, মুনাফা তোলার চেষ্টা অথবা প্রযুক্তিগত কারণে বাজারে ‘কাউন্টার মুভ’ ঘটতে পারে। তবে এটি স্থায়ী নয়। স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগকারীরা এ সময় লাভ তুলে নিতে পারেন। ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, “যুদ্ধের কারণে শেয়ারবাজারে পতন, এমনটা নয়। মূল সমস্যা হলো বিনিয়োগকারীরা বাজারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। যে কারণে সামান্য কিছু ঘটলেই তারা শঙ্কিত হয়ে পড়েন।” তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকের কারণে বিনিয়োগকারীরা হয়তো বিক্রির চাপ থেকে কিছুটা সরে এসেছেন। তবে, একে পুরোপুরি আস্থা ফিরে আসা বলা যায় না। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশের শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি বৈঠক করবেন। শেয়ারবাজার নিয়ে এটাই হতে যাচ্ছে তার প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। এই বৈঠকের ফলে বিনিয়োগকারীরা আশার আলো দেখছেন।