গাজায় চলমান সংঘাত নিরসনে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে হামাস। শনিবারের আলোচনা অনুযায়ী, তারা জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি চায়। প্রস্তাবনায়, হামাস তাদের হাতে থাকা অর্ধেক জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে গাজায় টানা ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কথা বলেছে। এই আলোচনা শুরু হয় ইসরায়েলি বাহিনীর গাজায় বড় ধরনের হামলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, হামাস ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির পাশাপাশি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ৯ জন জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি। স্কাই নিউজ আরাবিয়াও একই ধরনের প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেছে। কর্মকর্তা আরও জানান, প্রস্তাবিত চুক্তিতে প্রতিদিন ৪০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি এবং চিকিৎসার জন্য গাজা থেকে রোগীদের স্থানান্তরের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। হামাসের এই প্রস্তাবের পর ইসরায়েল অবশিষ্ট জিম্মিদের জীবিত থাকার প্রমাণ এবং বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছে। কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দোহায় এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ইসরায়েল প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে পূর্বে তারা জানিয়েছিল, গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার বা যুদ্ধ বন্ধের কোনো প্রতিশ্রুতি তারা দেবে না। বিবিসি জানিয়েছে, হামাসের প্রস্তাবে সম্ভবত এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। এর আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন গিদিওনস চ্যারিয়ট’ নামে গাজায় নতুন অভিযান শুরু করে, যা সাম্প্রতিক মাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। উদ্ধারকর্মীরা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে হাসপাতাল ও শরণার্থীশিবিরের লোকজনও রয়েছে। গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল পুনরায় হামলা শুরু করলে ৩ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায় এবং দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যায়। ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, গাজার মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, কারণ ইসরায়েল খাদ্য সরবরাহ এবং অন্যান্য ত্রাণে বাধা দিচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা দখল, ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে দেওয়া এবং হামাসকে ‘ধ্বংস’ করার জন্য বড় আকারের সামরিক অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন। গাজার ভেতর থেকে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক গাদা আল কুর্দ জানান, সেখানে ব্যাপক বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ ও ড্রোন হামলা চলছে। পরিস্থিতিকে তিনি ‘ভয়াবহ ও ভীতিকর’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি আরও বলেন, খাবার দুষ্প্রাপ্য ও ব্যয়বহুল হওয়ায় তাঁর পরিবার দিনে মাত্র একবার খাচ্ছে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার’ করার অভিযোগ তোলেন। জাতিসংঘের কর্মকর্তারাও একই অভিযোগ করেছেন। সাহায্য সংস্থাগুলো গাজার ২১ লাখ বাসিন্দার মধ্যে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছে এবং ইসরায়েলি অবরোধের কারণে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের ছবি ও বর্ণনা সামনে আসছে। ইসরায়েলের নতুন করে হামলা শুরুর পর জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এবং ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই হামলা গাজার পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে দিতে পারে এবং জিম্মিদের জীবনকেও ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।