ভারত সম্ভবত শোধরাবে না

ভারত সম্ভবত শোধরাবে না - জনাব মাহমুদুর রহমান

ভারত সম্ভবত শোধরাবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক: 

সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি নিয়ে কয়েকজন পশ্চিমা কূটনীতিকের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ হয়েছিল। তারা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের সাম্প্রতিক টানাপোড়েন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের মতে, আঞ্চলিক সহযোগিতার স্বার্থে বাংলাদেশকে অতীতের বিভেদ ভুলে ভবিষ্যতের দিকে নজর দেওয়া উচিত। তবে আমি তাদের সামনে পাল্টা যুক্তি তুলে ধরে বলেছিলাম যে, বৃহৎ দেশ হিসেবে ভারতেরই ছোট প্রতিবেশীদের প্রতি সহমর্মিতা দেখানো উচিত।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য দিল্লির উচিত নিরপেক্ষ ও সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা। ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি বাংলাদেশে ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে থাকে, তবে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হতে পারে। অতীতের ঘটনাগুলো একেবারে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়, বরং সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পথ নির্ধারণ করা উচিত।

সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বাংলাদেশকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন, যা উভয় দেশের সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তিনি বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উত্থাপন করে সরকারের প্রতি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। এটি আসলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এক প্রচারের অংশ, যেখানে বাংলাদেশকে ভুলভাবে চিত্রিত করা হয়।

ভারত দীর্ঘদিন ধরে নানা অজুহাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে আসছে। অতীতে ‘ইসলামি চরমপন্থা’ এবং ‘সংখ্যালঘু নিপীড়ন’ ইস্যু সামনে এনে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, ভারতে চরমপন্থা এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের ঘটনা অনেক বেশি প্রকট। সে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচিত।

বাংলাদেশের জনগণ বরাবরই ধর্মীয় সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে। তবে সাম্প্রতিক কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রচারণার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, যা কিছু মহল নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে চায়। এ কারণে রাষ্ট্রকে যেমন সজাগ থাকতে হবে, তেমনি জনগণেরও দায়িত্বশীল আচরণ করা প্রয়োজন।

বর্তমানে বিশ্বে ইসলামোফোবিয়ার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রচার চালানো হচ্ছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতেও প্রতিফলিত হচ্ছে। বাংলাদেশে একটি সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ ঘটছে, যেখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা বজায় রাখা জরুরি, যাতে কোনো চরমপন্থী গোষ্ঠী এ সুযোগ নিয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে না পারে।

আমাদের ইতিহাস বলে, এই অঞ্চলে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল সুফি সাধকদের মাধ্যমে, যারা শান্তি ও সহনশীলতার বাণী প্রচার করেছিলেন। সেই ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রেখে, আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব, যেখানে উগ্রবাদ ও আধিপত্যবাদী ষড়যন্ত্রের কোনো স্থান থাকবে না।