জুলাই মাসের উত্তাল আন্দোলনে ঢাকার ৫০টি থানার অধিকাংশ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন বেপরোয়া। আন্দোলন দমনে তাদের ভূমিকার কারণে তারা ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন। সেই সময়ের অনেক ওসি এখনো বহাল তবিয়তে আছেন, যা আন্দোলনকারীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, ওই সময় যেসব পুলিশ কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তারা কিভাবে এখনো স্বপদে বহাল আছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাদের দাবি, অবিলম্বে এসব পুলিশ কর্মকর্তাকে তাদের পদ থেকে সরিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এ বিষয়ে পুলিশের আইজি বাহারুল আলম জানান, জুলাই বিপ্লবের ঘটনায় হওয়া মামলাগুলো তারা পর্যালোচনা করছেন। যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, কেউ যদি নির্দোষ হন, শুধুমাত্র পুলিশ হওয়ার কারণে তিনি যেন হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এরই মধ্যে কয়েকজন ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। তদন্তে জানা গেছে, ওই সময়ে ডিএমপির ৫০টি থানায় ৫৮ জন ওসি দায়িত্ব পালন করেছেন। এদের মধ্যে মাত্র ১০ জনকে শাস্তির মুখোমুখি করা হয়েছে। তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, চারজন পলাতক রয়েছেন, দুজনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে এবং একজনকে সংযুক্ত করা হয়েছে। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, উত্তরখান থানার তৎকালীন ওসি আবু সাঈদ আল মামুন বর্তমানে চট্টগ্রাম রেঞ্জ অফিসে কর্মরত আছেন। ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি শাহীনুর রহমান লালমনিরহাট পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে, বনানী থানার ওসি কাজী শাহান হক রংপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে, দক্ষিণখান থানার ওসি আমিনুল বাশার শিল্প পুলিশ চট্টগ্রামে এবং তুরাগ থানার ওসি শেখ সাদিক আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সিলেটে কর্মরত আছেন। খিলক্ষেত থানার ওসি হুমায়ুন কবির এখনো ট্যুরিস্ট পুলিশ হেড অফিসে বহাল আছেন। বাড্ডা থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসীন গাজী কক্সবাজার এপিবিএনে এবং নিউ মার্কেট থানার ওসি আমিনুল ইসলাম শিল্প পুলিশ গাজীপুরে কর্মরত আছেন। অন্যান্য অভিযুক্ত ওসিদেরও বিভিন্ন স্থানে স্বাভাবিক পোস্টিংয়ে দেখা গেছে। অন্যদিকে, মতিঝিল থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত খানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। উত্তরা পূর্ব থানার ওসি মজিবুর রহমানকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে এবং শাহ আলম নামে আরেক ওসি পালিয়ে গেছেন। তুরাগ থানার ওসি আনিচুর রহমান মোল্লাকে সরকার বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছে। গুলশানের ওসি মাজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আবুল হাসান এখন কারাগারে আছেন। মিরপুর মডেল থানার ওসি মুন্সী ছাব্বীর আহম্মদ এবং পল্লবীর অপূর্ব হাসান এখনো পলাতক। আন্দোলনকারীদের দাবি, শুধুমাত্র কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দায় এড়ানো উচিত নয়। যারা এখনো বহাল তবিয়তে আছেন, তাদের প্রত্যেকের ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।