ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রগুলোর সংস্কার ও মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে, নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং কিছু দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এছাড়াও, নির্বাচনী সামগ্রী ছাপানোর বিষয়ে মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছে ইসি। কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার থেকে সংকেত পেলে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের জন্য ইসি সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, 'আমাদের হাতে সময় কম। তাই সব কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।' সূত্র জানায়, ভোটকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে ভোটকেন্দ্রের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ এবং দরজা-জানালার সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদকে নিজস্ব অর্থায়নে এসব কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইসি আরও জানায়, ভোটকেন্দ্রের তালিকায় থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের জন্য চলতি অর্থবছরে বরাদ্দকৃত অর্থ দ্রুত ছাড় করা হলে কাজ সম্পন্ন করা সহজ হবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে প্রায় ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র ছিল। এবার এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠকের পর সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, তাঁরা ডিসেম্বর মাসকে লক্ষ্য রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঈদের পর কর্মকর্তাদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, আগামী জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। নির্বাচনী সামগ্রী কেনার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, ইসি প্রায় এক লাখ বড় হেসিয়ান ব্যাগ, ৬০ হাজার ছোট হেসিয়ান ব্যাগ, এক লাখ গানি ব্যাগ, ২০ হাজার কেজি গালা এবং ৪০ লাখ ব্যালট বাক্সের লক কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে। আগামী ১৩ মে এসব দরপত্র খোলা হবে। ইসি সূত্র আরও জানায়, সংসদ নির্বাচনের জন্য ব্যালট পেপার, ২১ প্রকার ফরম, ১৭ প্রকার প্যাকেট, পাঁচ প্রকার পরিচয়পত্র, আচরণবিধি, প্রতীকের পোস্টার, নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েলসহ ৫৩ ধরনের নির্বাচনী সামগ্রী ছাপাতে হয়। এ জন্য ১৫ এপ্রিল মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকে জানানো হয়েছে, এসব ছাপানোর জন্য কাগজ কিনতে ৩ থেকে ৪ মাস সময় লাগবে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন পোস্টাল ব্যালটের পাশাপাশি অনলাইন ভোটিং এবং প্রক্সি ভোট চালুর সুপারিশ করেছে। এ নিয়ে সম্প্রতি একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রবাসী ভোটারদের সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনা করবে ইসি। এছাড়াও, পর্যবেক্ষক, ভোটকেন্দ্র নীতিমালা, আচরণবিধি এবং সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইন সংশোধনের কাজ চলছে। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও ভোটার নিবন্ধনের কাজও চলমান রয়েছে। ২ মার্চের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন ভোটার রয়েছেন। এদের মধ্যে ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৬১৫ জন পুরুষ, ৬ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৬৫ জন নারী এবং ৯৯৪ জন হিজড়া ভোটার। নিবন্ধন কার্যক্রম শেষে আরও ৪০ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত হতে পারে।