ইনসাফের গুরুত্ব

লেখক - এডভোকেট কামরুল ইসলাম, জজ কোর্ট, মৌলভীবাজার৷

ইনসাফের গুরুত্ব

ইনসাফ অর্থ ন্যায়বিচার, সাম্য এবং সুবিচার। ইসলাম ধর্মে ইনসাফের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এটি সমাজের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কুরআন ও হাদিসে ইনসাফকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গুণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

১. ইসলাম ও ইনসাফ

ইসলামে ইনসাফকে ঈমানের অপরিহার্য অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচার করতে এবং সদাচরণ করতে আদেশ করেন...” 
(সূরা নাহল: ৯০)

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট হয় যে ইনসাফ শুধু ব্যক্তিগত গুণ নয়, বরং এটি একটি ধর্মীয় আদেশ।

একজন নেতার সবচেয়ে বড় গুণ ইনসাফ। ইনসাফ করতে ব্যর্থ মানে আপনি দায়িত্বে ব্যর্থ। 
একজন ব্যক্তির যে দায়িত্বই থাকুক, ছোট কিংবা বড়, সে যায়গায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে৷ 

একজন পরিবারের অভিভাবক সে তার পরিবারের সকলের মাঝে সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করবে। গ্রামের কোন কমিটির দায়িত্বে থাকলে তার অধীনস্ত সবাইকে সমান গুরুত্ব দিবে, (ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, কেন্দ্র) যেখানে যে পদে থাকবে তার অধীনস্হ সবার প্রতি ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবে। 

২. ইনসাফ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে

যে সমাজে ইনসাফ নেই, সেখানে অন্যায়, অবিচার ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজে শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং মানুষের মধ্যে বিশ্বাস ও সম্প্রীতি গড়ে ওঠে।

৩. নেতৃত্ব ও ইনসাফ

একজন নেতা বা শাসকের জন্য ইনসাফ অপরিহার্য। মহানবী (সা.) বলেছেন:

“ন্যায়পরায়ণ শাসক কিয়ামতের দিন আল্লাহর ছায়াতলে থাকবে।”
(সহিহ মুসলিম: ১৮২৭)

এর অর্থ হলো, যারা নিজেদের অধীনস্থদের প্রতি ন্যায়পরায়ণ থাকবেন, তারা পরকালে মহান মর্যাদার অধিকারী হবেন।

৪. ব্যক্তিগত জীবনে ইনসাফের প্রয়োজনীয়তা

ইনসাফ শুধু শাসকদের জন্য নয়, বরং প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে এটি গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মা তাদের সন্তানদের প্রতি, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রতি, ব্যবসায়ী তার ক্রেতার প্রতি ইনসাফ করলে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক মজবুত হয়।

৫. ইনসাফের অভাবের ফলাফল

যদি সমাজে ইনসাফ না থাকে, তবে দুর্নীতি, অন্যায় ও বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। ফলে সমাজে অস্থিরতা, বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়, যা উন্নয়ন ও শান্তির পথে বড় বাধা।

উপসংহার

ইনসাফ শুধু ধর্মীয় নির্দেশ নয়, এটি মানবতার একটি অপরিহার্য ভিত্তি। কিন্তু বর্তমান দায়িত্বশীলদের মধ্যে ইনসাফের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। অতচ ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও উন্নত সমাজ গঠন করতে পারি। তাই আমাদের উচিত সর্বদা ন্যায় ও সত্যের পথে থাকা এবং সকলের প্রতি ইনসাফ করা।