ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও জোরদার করেছে। রাজনৈতিক দমন-পীড়নের কারণে ইতিপূর্বে তাদের কর্মকাণ্ডে যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছিল, তা কাটিয়ে উঠে জনগণের কাছে দলের বার্তা পৌঁছে দিতে জামায়াত এখন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে, ঈদ পরবর্তী সময়ে জামায়াতে ইসলামী ‘গণসংযোগ পক্ষ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এবং সারা দেশে তাদের নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচি পালনে সক্রিয় হয়েছেন। কেন্দ্র ঘোষিত এই গণসংযোগ পক্ষ শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, গণসংযোগ পক্ষের প্রথম দিনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। তারা জনগণের মাঝে জামায়াতে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে প্রচারপত্র বিলি করেন, গণসংযোগ করেন এবং পথসভার মাধ্যমে দলের বার্তা দেন। সারা দেশে একই ধরনের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। শুক্রবার ডেমরা মধ্য থানায় গণসংযোগ পক্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, জামায়াতে ইসলামী কোনো ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার বা বিদেশি শক্তির সঙ্গে আপস করেনি। এ কারণে জামায়াতের ওপর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং জুলুম-নির্যাতন চালানো হয়েছে। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচারিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে এবং লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যারা আল্লাহর পথে কাজ করতে চায় এবং মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করে, তাদের কখনো নিঃশেষ করা যায় না। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ জামায়াতকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে না পেরে নিবন্ধন বাতিল করেছে এবং দলের অফিসগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে এবং ইসলামকে জঙ্গিবাদ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জামায়াত থেমে থাকেনি। পরবর্তীতে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলেও জনগণ তাদের বিতাড়িত করেছে। জামায়াত ও জনগণ একই সূত্রে গাঁথা এবং জামায়াত জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়বে। নূরুল ইসলাম বুলবুল আরও বলেন, জামায়াতের কার্যক্রমে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি দল আওয়ামী লীগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি আহ্বান জানান, অপপ্রচার না চালিয়ে জামায়াতের জনকল্যাণমুখী কার্যক্রম অনুসরণ করে জনগণের আস্থা অর্জন করতে। তিনি দায়িত্বশীল নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান, কেন্দ্র ঘোষিত গণসংযোগ পক্ষের কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিটি এলাকার ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে। এটি শুধু দলীয় দায়িত্ব নয়, বরং আল্লাহর নির্দেশিত দায়িত্ব। অনুষ্ঠানে তিনি ৪৫০ জন যুবক ও পেশাজীবীর হাতে আল-কুরআন তুলে দেন এবং জামায়াতের সহযোগী সদস্য ফরম পূরণের মাধ্যমে গণসংযোগ ও দাওয়াতি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এছাড়াও, জামায়াতে ইসলামী খিলগাঁও পশ্চিম থানার উদ্যোগে খিলগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে ঈদ পুনর্মিলনী ও গণসংযোগ পক্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মহানগর দক্ষিণের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সহকারী সম্পাদক আব্দুস সাত্তার সুমন জানান, বিভিন্ন থানায় গণসংযোগ পক্ষ পালনে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজধানীর উত্তরায় গণসংযোগ পক্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামী দেশে আল্লাহর আইন, সৎ লোকের শাসন এবং পরিশুদ্ধ জনবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের তৈরি মতবাদ দিয়ে মানুষের কল্যাণ সম্ভব নয়। তাই দেশকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে আল্লাহর আইনের কোনো বিকল্প নেই। তিনি প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে ইসলামের আদর্শ তুলে ধরার আহ্বান জানান। সেলিম উদ্দিন বলেন, দেশে জামায়াতের দাওয়াতি পক্ষ চলছে। তাই কর্মীদের ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। বরং সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো তাদের কর্তব্য। দেশে সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে দেশ অপরাধ ও দুর্নীতিমুক্ত হবে, একথা মানুষকে বোঝাতে হবে। তিনি দাওয়াতি পক্ষকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান এবং কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। জনাব সেলিম উদ্দিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে জামায়াতের পরিচিতি তুলে ধরেন এবং তাদের সহযোগী সদস্য হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। মহানগর উত্তরের বিভিন্ন থানায় গণসংযোগ পক্ষের তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন উত্তরের প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার।