গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিচার শুরু হতে পারে মে মাসেই

স্টাফ রিপেোর্টারঃ

গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিচার শুরু হতে পারে মে মাসেই

মে মাসেই শুরু হতে পারে শেখ হাসিনার বিচার: গণহত্যার অভিযোগের প্রস্তুতি চূড়ান্ত

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার বিচার কার্যক্রম মে মাসেই শুরু হতে পারে। প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, সুপিরিয়র কমান্ড হিসেবে গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন।

অভিযোগে শুধুমাত্র শেখ হাসিনা নন, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিক, পলাতক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের মতো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আলাদা চার্জশিট দাখিলের প্রস্তুতি চলছে।

প্রসিকিউশন আশা করছে, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই ট্রাইব্যুনালে এই চার্জশিট উপস্থাপন করা সম্ভব হবে। সুপিরিয়র কমান্ডের পাশাপাশি আরও দুটি চার্জশিট দাখিলের জন্য প্রসিকিউশন এবং তদন্ত সংস্থাগুলো দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি, গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে একটি চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। প্রসিকিউশন সূত্র জানিয়েছে, এই চার্জশিটের ভিত্তিতে খুব শীঘ্রই চার্জ গঠনের আবেদন জানানো হবে।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে খবর, মে মাসের প্রথমার্ধেই একাধিক মামলার বিচার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর প্রস্তুতি চলছে। চার্জশিট দাখিলের পর ট্রাইব্যুনাল সন্তুষ্ট হলে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে। বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে ট্রাইব্যুনালে চার্জশিট পেশ, চার্জ গঠনের শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ এবং আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক।

যদিও প্রসিকিউশন বারবার ডিসেম্বরের মধ্যে একাধিক মামলার নিষ্পত্তি করার আশ্বাস দিয়েছে, তবে ১৫ বছরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এখনো প্রথম ধাপে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের জন্য পৃথক অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। সব ঘটনায় শেখ হাসিনাকে আসামি করা হলেও, তার বিচার হবে সুপিরিয়র কমান্ড হিসেবে। তার সঙ্গে আসাদুজ্জামান খান কামাল, তারিক আহমদ সিদ্দিক এবং পুলিশের আইজি ও র‌্যাবের ডিজি-ও আসামি থাকবেন।

প্রসিকিউশন গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে। তার নির্দেশের অডিও-ভিডিও এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাজসাক্ষী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।

তদন্ত সংস্থাগুলো হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে গুলিবর্ষণকারীদের শনাক্ত করছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেওয়ার সময় অনেকেই ভিডিও ফুটেজ সরবরাহ করছেন। ভিডিও ফুটেজ দেখে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এদিকে, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীসহ রাজনৈতিক নেতাদের গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধেও চার্জশিট প্রায় চূড়ান্ত। এ সংক্রান্ত দুটি ঘটনায় শেখ হাসিনা ও তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল এবং তাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারির সুপারিশ করা হয়েছে।

গণঅভ্যুত্থানের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রমের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়।

শেখ হাসিনার শাসনামলে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে। গুম হওয়া অনেক নেতাকর্মীর আর কোনোদিন ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। গুমের শিকার পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এ নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।

২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড, ২০১৩ সালে আল্লামা সাঈদীর মামলার রায়ের পর প্রতিবাদী জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি, শাপলা চত্বরের গণহত্যা এবং সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডসহ বেশ কয়েকটি গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবার বিচারের দিকে তাকিয়ে আছে।

ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম জানান, তার টিম রাতদিন কাজ করছে এবং আগামী মাসের মধ্যেই অন্তত তিনটি মামলার বিচার শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, সুপিরিয়র কমান্ডে যারা ছিলেন, তাদের বিচার আগে করার চেষ্টা চলছে।

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে। এতে দুই হাজারের বেশি লোক শহীদ হয়েছেন এবং ২৫ থেকে ৫০ হাজারের মতো লোক আহত হয়েছেন। অপরাধীদের সংখ্যা অনেক হওয়ায় মামলাগুলোর তদন্ত সময়সাপেক্ষ। তবে সুপিরিয়র কমান্ডারদের মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগিয়ে আনা হয়েছে।