নারী নির্যাতন আইন সংশোধন: বিতর্ক ও সমালোচনা

অনলাইন ডেস্ক:

নারী নির্যাতন আইন সংশোধন: বিতর্ক ও সমালোচনা

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার পর ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের বিচার কার্যক্রম ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। এছাড়া, ট্রাইব্যুনাল চাইলে মেডিকেল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে পারবে। পূর্বে ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক থাকলেও, সংশোধিত আইনে এটিকে ঐচ্ছিক করা হয়েছে।

সংশোধিত আইনে সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়নি। তবে, এক্ষেত্রে শুধু পুরুষের জন্য সাত বছরের সাজার বিধান রাখা হয়েছে, যা নিয়ে সমালোচনা চলছে। এছাড়া, মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে বাদীর সাজা কমানো হয়েছে। এসব সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। আইনজীবীরা মনে করেন, এই আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে পুরুষদের হয়রানি করার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে, কারণ এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর পরিচয় গোপন থাকলেও অভিযুক্তের পরিচয় প্রকাশ করা হয়।

সংশোধিত আইনের ৯খ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে কোনো নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন, সেক্ষেত্রে অনধিক সাত বছর কারাদণ্ড হতে পারে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, নারী ও শিশুদের সুরক্ষার জন্য এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে, নারীরা এখন সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে, তাই শুধু তাদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ আইন না করে শিশুদের নিরাপত্তার জন্য আইন রাখাই যুক্তিযুক্ত।

নারী ও শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্কে উভয়ের অংশগ্রহণ থাকে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র একজনকে শাস্তি দেওয়া ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

হানিফ শেখ বনাম আছিয়া বেগম মামলায় ১৯৯৮ সালে হাইকোর্ট বলেন, ১৬ বছরের বেশি বয়সের কোনো মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন সম্পর্ক করলে তা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে না। এছাড়া, সোহেল রানা বনাম রাষ্ট্র মামলায় হাইকোর্ট বলেন, যৌন সম্পর্কে ভিকটিম বাধা না দিলে বা চিৎকার না করলে তা সম্মতি হিসেবে বিবেচিত হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান মনে করেন, বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের বিচার দণ্ডবিধিতে থাকা উচিত, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নয়, কারণ এই আইনের অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার রায়ে আদালত ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত মেডিকেল পরীক্ষা ও মামলা করার পরামর্শ দেন।

ভারতের ওড়িশা হাইকোর্ট ২০২৩ সালে জানিয়েছেন, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক ধর্ষণ নয়। এছাড়া, এলাহাবাদ হাইকোর্ট বলেন, দীর্ঘ শারীরিক সম্পর্কের পরও বিয়েতে অসম্মতি ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে না। ভারতের সুপ্রিম কোর্টও এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

সংশোধিত আইনের ৯খ ধারা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়েছে। রিটকারীদের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, সম্পর্ক ভেঙে গেলে প্রতিশোধের জন্য এই আইনের অপব্যবহার হতে পারে। তিনি মিথ্যা মামলার সাজা কমানোর বিষয়টিরও সমালোচনা করেন।