জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের সাক্ষাৎকার: স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় নির্বাচন, সব বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরলেন তিনি। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। দলের অন্যতম নীতিনির্ধারক, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার সম্প্রতি 'আজকের পত্রিকা'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দলের গঠনতন্ত্র, নিবন্ধন প্রক্রিয়া এবং স্থানীয় পর্যায়ে দলের কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আব্দুর রহমানের নেওয়া এই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের নানা দিক। প্রতিনিধি: স্থানীয় পর্যায়ে দল গোছানোর ক্ষেত্রে এনসিপির পরিকল্পনা কী? সারোয়ার তুষার: আমরা তৃণমূল স্তর থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যন্ত সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চাই। এই লক্ষ্যে কাজ চলছে। আশা করছি, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে আমরা সক্ষম হবো। প্রতিনিধি: আপনাদের দলের গঠনতন্ত্র কবে প্রকাশিত হবে? এতে কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে? সারোয়ার তুষার: গঠনতন্ত্রের খসড়া প্রায় চূড়ান্ত। বর্তমানে এটি পর্যালোচনার মধ্যে আছে। যেহেতু মে মাসের মাঝামাঝি নাগাদ নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার পরিকল্পনা রয়েছে, তাই এর আগেই আমরা গঠনতন্ত্র প্রকাশ করতে চাই। আমরা এমন একটি পদ্ধতি তৈরি করতে চাই, যেখানে দল কোনো ব্যক্তির উপর নির্ভরশীল না হয়ে একটি কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হবে। দলীয় নেতৃত্বে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে, যাতে ব্যক্তি বিশেষের খেয়ালখুশির ওপর দলের ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল না হয়। প্রতিনিধি: জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন? কত আসনে প্রার্থী দিতে চান? জোট গঠনের বিষয়ে আপনাদের ভাবনা কী? সারোয়ার তুষার: জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে এনসিপির ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। আমরা ৩০০টি আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। স্থানীয় পর্যায়ে প্রার্থী বাছাই এবং দল গোছানোর কাজ চলছে। জোট গঠন করার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। প্রতিনিধি: জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে এনসিপির প্রস্তাব কী? সারোয়ার তুষার: এনসিপি জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের ফসল। সরকার আমাদের কাছে ঘোষণাপত্র প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এটি গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঐতিহাসিক দলিল। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রের মতো, জুলাই ঘোষণাপত্রও থাকা প্রয়োজন। আমরা দেখছি, অনেকে এই অভ্যুত্থানকে 'তথাকথিত' বলছেন, যা খুবই উদ্বেগজনক। ভবিষ্যতে এটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করার চেষ্টা হতে পারে। তাই সরকারের উচিত তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা। এই ঘোষণাপত্রে জনগণের মুক্তি কেন বার বার হাতছাড়া হয় এবং কীভাবে তা রক্ষা করা যায়, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস এবং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রূপরেখা এতে থাকা উচিত। প্রতিনিধি: প্রশাসনে বিএনপির লোক থাকার বিষয়ে নাহিদ ইসলামের বক্তব্য নিয়ে আপনার মতামত কী? সারোয়ার তুষার: এটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি। স্থানীয় পর্যায়ে আমরা দেখেছি, প্রশাসন একটি বিশেষ দলের হয়ে কাজ করছে, অনেককে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পক্ষ থেকে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। নিরপেক্ষ কর্মকর্তারাও তাদের অসহায়তার কথা জানিয়েছেন। বিএনপি তাদের পছন্দের লোকদের বিভিন্ন পদে বসিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা ভিজিএফ কার্ড ও অন্যান্য সুবিধা নিজেদের লোকের হাতে তুলে দিচ্ছে। প্রতিনিধি: জুলাই আন্দোলনের দুইজন সহযোগী অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা থাকা সত্ত্বেও, প্রশাসনে কীভাবে বিএনপির প্রভাব বিস্তার সম্ভব? সারোয়ার তুষার: এখন সরকার ও রাষ্ট্র এক নয়, বরং আলাদা। অনেক ক্ষেত্রে, সরকার প্রশাসনের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। সরকারের নির্দেশ অনেক সময় অবহেলিত হচ্ছে, কারণ এটি রাজনৈতিক দলগুলোর সরকার নয়। প্রশাসনে থাকা পুরোনো কর্মকর্তারা তাদের অভিন্ন স্বার্থ রক্ষায় একজোট হয়ে পরিবর্তনের গতি কমিয়ে দিচ্ছেন। আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে আছেন। তারা না থাকলে সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। প্রতিনিধি: অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এনসিপির দূরত্ব কেন বাড়ছে? সারোয়ার তুষার: দুটি কারণে দূরত্ব বাড়ছে। প্রথমত, এনসিপির জনপ্রিয়তা এবং জনসমর্থন দেখে অন্যান্য দলগুলো ভয় পাচ্ছে। তারা মনে করছে, এনসিপি একটি গণজোয়ার তৈরি করতে পারে। দ্বিতীয়ত, এনসিপি প্রথাগত দল নয়। এটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত, যা রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তন চায়। অন্যদিকে, অন্যান্য দলগুলো পুরোনো কাঠামো টিকিয়ে রাখতে চায়। প্রতিনিধি: স্থানীয় পর্যায়ে নেতাদের সর্বনিম্ন বয়স ৪০ করার ঘোষণা এসেছে। কিন্তু কেন্দ্রে আপনারা সবাই তরুণ। এটি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? সারোয়ার তুষার: এনসিপির লক্ষ্য তারুণ্যের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। তবে, দলের শীর্ষ পদে অভিজ্ঞ এবং পরিপক্ক নেতাদের প্রয়োজন। অন্যান্য দলের কেন্দ্রীয় নেতারাই জেলা কমিটির প্রধান হন। তাই তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে এবং গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে, এই শর্ত শিথিল করার জন্য অনেকে অনুরোধ করছেন, যা নীতিনির্ধারণী ফোরামে পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে।তথ্যসূত্র:- আজকের পত্রিকা