নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না পেয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের সঙ্গে অংশীজনদের সন্দেহ ও অবিশ্বাসের কারণে রাজনীতিতে বিভাজন বাড়তে পারে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন অন্তর্বর্তী সরকারের দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি আলোচনায় আসছে এবং এর সম্ভাবনা কতটুকু? বিএনপি নেতারা বলছেন, আট মাস পেরিয়ে গেলেও সরকার নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিচ্ছে না, যা সন্দেহ সৃষ্টি করছে। বিশ্লেষকরা এই পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দায়ও দেখছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। তবে, এই সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার, হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর সরকারের মেয়াদ নির্ভরশীল বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচন ডিসেম্বর বা আগামী জুনে হতে পারে, এমন বিতর্ক চলছে। এই বিতর্কের মধ্যে, সামাজিক মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার আলোচনা চলছে, যেখানে কিছু উপদেষ্টা ও রাজনীতিবিদের বক্তব্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সম্প্রতি বলেন, জনগণ তাদের আরও পাঁচ বছর থাকার কথা বলছে। এতে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয় এবং বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অভিযোগ করেন, সরকার নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে এবং অনির্বাচিত কাউকে জনগণ দীর্ঘ সময় মেনে নেবে না। জবাবে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ছাত্র ও জনতা তাদের নির্বাচিত করেছে। এসব বক্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে বিতর্ক বাড়িয়েছে। যদিও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দাবি করেছেন, তিনি সরকারের পাঁচ বছর থাকার কথা বলেননি, তবুও বিতর্ক থামেনি। বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেওয়ায় সরকারের দীর্ঘ মেয়াদে থাকার প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিএনপি ক্ষমতায় আসার আশায় চাঁদাবাজি ও দখলে জড়িয়ে পড়েছে, যা তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এ কারণে অনেকে মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকুক। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলে আইনগত প্রশ্ন উঠতে পারে এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন কমে যেতে পারে। সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকারের বিধান না থাকায়, আপিল বিভাগের মতামত নেওয়া হয়েছিল। আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, আদালতের মতামত মানার বাধ্যবাধকতা নেই। তিনি আরও বলেন, এই সরকারকে নির্বাচিত সংসদে বৈধতা দিতে হবে, অন্যথায় আইনগত ও আন্তর্জাতিক সমস্যা হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, সরকারের সময় দীর্ঘ হলে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং এর লম্বা সময় ক্ষমতায় থাকা কঠিন হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তারা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছেন এবং প্রধান উপদেষ্টা কোনো সুনির্দিষ্ট ডেডলাইন দেননি। তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে বলে সতর্ক করেন। বৈঠকে উপস্থিত উপদেষ্টারা জানান, নির্বাচন কোনোভাবেই জুনের পরে যাবে না। তবে, উপদেষ্টাদের বিভিন্ন মন্তব্য বিভ্রান্তি তৈরি করছে বলে বিএনপি মনে করে। জামায়াতে ইসলামীও রোজার আগে নির্বাচন চায়, তবে এনসিপি সংস্কার শেষ না করে নির্বাচনের বিপক্ষে। সিপিবিসহ অন্য দলগুলোও নির্বাচনের পক্ষে, যদিও সময় নিয়ে মতভেদ আছে। বিএনপি জুলাই চার্টারে সই করবে বলে জানালেও, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে চায়।