যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে বেশিরভাগ দেশকেই ১০ শতাংশ শুল্ক থেকে কিছু ছাড় দেওয়া হবে। তবে, বাণিজ্যিক চুক্তি নিয়ে দর কষাকষি করতে ইচ্ছুক দেশগুলোর জন্য এই শুল্ক সর্বনিম্ন সীমা হিসেবে বিবেচিত হবে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ফ্লোরিডার উদ্দেশে যাত্রা করার সময় এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। ট্রাম্প বলেন, প্রায় ৬০টি দেশের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। তবে, বেশিরভাগ দেশকেই এই শুল্ক থেকে কিছুটা ছাড় দেওয়ার বিষয়ে তিনি আগ্রহী। তবে, এই ছাড় শুধুমাত্র তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে যারা বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে চায়। পাল্টা শুল্ক নিয়ে বিভিন্ন দেশের আগ্রহ এবং হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ট্রাম্প বলেন, 'কিছু বিশেষ কারণে ব্যতিক্রম হতে পারে। তবে আমি বলবো, ১০ শতাংশ হল সর্বনিম্ন সীমা।' যদিও তিনি সেই 'বিশেষ কারণগুলো' সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি। এদিকে, ট্রাম্পের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো যখন শেয়ার ও বন্ড বাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। তার বাণিজ্য নীতি নিয়ে বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা এমনিতেই উদ্বেগে রয়েছেন, নতুন এই ঘোষণায় অনিশ্চয়তা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে, ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারে ধস নামে। পরবর্তীতে আর্থিক বাজারে অস্থিরতা কমাতে এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে তিনি সেই শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন। তবে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের ওপর সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে, চীনও পাল্টা মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছে। অন্যান্য দেশ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা করলে ট্রাম্প ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক বহাল রেখে পাল্টা শুল্ক স্থগিত করেন। ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের ঘোষণার পর শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং ২০২৩ সালের পর সেরা সপ্তাহ দেখেছে। ফেডারেল রিজার্ভের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রস্তুত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান ফিরিয়ে আনা এবং সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হলেও, এটি অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। একইসাথে, নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের যে মর্যাদা রয়েছে, সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে, শুক্রবারের বক্তব্যে ট্রাম্প বাজারের অস্থিরতাকে তেমন গুরুত্ব দেননি। তিনি বলেন, 'আমার মনে হয়, আজকের বাজার স্থিতিশীল ছিল। মানুষ বুঝতে পারছে আমরা ভালো অবস্থানে আছি।' মার্কিন ডলার সবসময় পছন্দের মুদ্রা থাকবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, 'যদি কোনো দেশ ডলার ব্যবহার করতে না চায়, তবে আমি বলতে পারি, একটি ফোনকলের মাধ্যমেই তারা ডলারে ফিরে আসবে। আপনাদের সবসময় ডলার ধরে রাখতে হবে।' মার্কিন ট্রেজারিগুলোর উত্থানপতন নিয়েও ট্রাম্প চিন্তিত নন। তিনি বলেন, বন্ড মার্কেট ভালো চলছে। সামান্য সমস্যা হয়েছিল, তবে খুব দ্রুত সেই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। ব্লুমবার্গ ইকোনমিকসের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্ত অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের জন্য সাময়িক স্বস্তি দিলেও চীনের ওপর উচ্চ শুল্কের কারণে গড় মার্কিন শুল্ক হার ঐতিহাসিক পর্যায়ে চলে যাবে। এর ফলে বিশ্বের বৃহত্তম দুটি অর্থনীতির মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী বাণিজ্য বিরোধ ৬৯০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। বেইজিং ইতিমধ্যে মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা হোয়াইট হাউসের পদক্ষেপের সরাসরি প্রতিক্রিয়া। চীন জানিয়েছে, তারা আর শুল্ক বাড়ানোর পথে হাঁটবে না, তবে অন্যান্য উপায়ে 'শেষ পর্যন্ত লড়াই' চালিয়ে যাবে। শুক্রবার চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, 'আমার মনে হয় ইতিবাচক কিছু ঘটবে।' তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে 'খুব ভালো এবং বুদ্ধিমান নেতা' হিসেবেও অভিহিত করেন।