সাইবার নিরাপত্তা আইনের পর এবার সরকার জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতিমালা প্রণয়নের দিকে এগোচ্ছে। বর্তমানে নীতিমালার খসড়াটি চূড়ান্ত পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে এবং আশা করা যাচ্ছে, এটি জুলাই মাসের মধ্যেই জারি করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী জানান, এআই নীতিমালা প্রণয়নের কাজ বেশ আগে শুরু হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর এটি জুলাই নাগাদ কার্যকর করা সম্ভব হবে। ধারণা করা হচ্ছে, জুনেই উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পাওয়া যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে খসড়া নীতিমালা নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিশেষজ্ঞ এবং অংশীজনদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হওয়ার পর জুলাইয়ের মধ্যেই এই নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। ইউনেস্কো, এটুআই, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং ইউএনডিপি সম্মিলিতভাবে ‘বাংলাদেশ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রেডিনেস অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’-এর খসড়া তৈরি করেছে। সেখানে জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা, ২০২৪ এবং জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশল (২০১৯-২৪) উভয়টিকেই খসড়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউনেস্কোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিসংক্রান্ত সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নীতিমালাটি তৈরি করা হয়েছে। তবে, বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে এটি হালনাগাদ করা প্রয়োজন। নীতিমালার উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক দিকনির্দেশনা এবং জাতীয় কৌশল হালনাগাদের পরিকল্পনা। আইনশৃঙ্খলা, মানবাধিকার, মর্যাদা ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিশ্চিত করা। ডেটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। প্রতি তিন বছর অন্তর নীতিমালাটি পর্যালোচনা করা হবে। ইউনেসকোর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যেহেতু বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিকতা বিষয়ক সুপারিশগুলো ইসলামিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। বিশেষ করে, ঘনিষ্ঠ সম্পর্কভিত্তিক এআই বা ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেসের মতো বিষয়গুলো দেশের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে খাপ নাও খেতে পারে। এআই নীতিমালা কেন প্রয়োজন, সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআইয়ের অপব্যবহারের মাধ্যমে হ্যাকিং ও স্প্যামিংয়ের ঝুঁকি রয়েছে। ডিপফেক ভিডিও, ভুয়া ছবি তৈরি করে সম্মানহানি ও ব্ল্যাকমেলিংয়ের মতো অপরাধ বাড়ছে। তাই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এআইয়ের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করছে। বাংলাদেশেও টেলিযোগাযোগ, মোবাইল ব্যাংকিং ও কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি যুগোপযোগী এআই নীতিমালা খুবই জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।