রোজার অনন্য উপহার

আলী হাসান তৈয়ব

রোজার অনন্য উপহার

অনলাইন সংগৃহিত: রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, আদম সন্তানের সব আমল তার নিজের জন্য। কেবল রোজা আমার জন্য। তাই আমিই এর প্রতিদান দেব। রোজা ঢালস্বরূপ। যদি তোমাদের কেউ সিয়াম পালন করে, তাহলে সে যেন অশ্লীল কথা না বলে।

যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়, তবে সে যেন বলে, আমি সিয়াম পালনকারী। ওই সত্তার শপথ! যার হাতে আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন, নিশ্চয়ই সিয়াম পালনকারীর মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশক আম্বরের চেয়েও অধিক প্রিয়। (বুখারি ও মুসলিম)

উদ্ধৃত হাদিসে কুদসিতে রোজার বহুবিধ মর্যাদা ও তাৎপর্য ঘোষিত হয়েছেÑ রোজা শুধু আল্লাহর জন্য, আল্লাহ তা’আলা সব ইবাদতের মধ্য থেকে রোজাকে নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। কারণ রোজার মধ্য দিয়ে আল্লাহর প্রতি বান্দার নিষ্ঠা ও ভক্তি দৃশ্যমান হয়।

রোজার মতো করে অন্য কোনো ইবাদতে এভাবে বান্দা তার মালিকের জন্য নিবেদিত হয় না। রোজাদার ইচ্ছা করলে লোকচক্ষুর আড়ালে কিছু খেয়ে নিতে পারেন, কিন্তু একজন সাধারণ রোজাদারও তা করেন না। কারণ তিনি সর্বদ্রষ্টা আল্লাহকে ভয়-ভক্তি উভয়ই করেন। তিনি জাহান্নামে ভয়ে রোজার বিধি মানছেন। জান্নাত লাভের আশায় সিয়াম সাধনা করছেন।

রোজার পুরস্কার আল্লাহ নিজেই দেবেন

রোজার পুরস্কার সম্পর্কে আল্লাহ বলেন : ‘রোজার প্রতিদান আমি নিজে দেব।’ রোজা ছাড়া অন্যান্য নেক আমলের প্রতিদান দ্বিগুণ করে দেওয়া হবে। প্রতিটি নেক আমল ১০ থেকে ৭০০ গুণ এমনকি তার চেয়েও বেশি হারে দেয়া হবে বলে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে। আর রোজার সাওয়াবের কোনো সীমা-সংখ্যা নেই বলে আল্লাহ আপন সত্তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করেছেন।

আমরা জানি, যেকোনো দানই হয়ে থাকে দাতার মান ও শানমাফিক। তাই আল্লাহ যেমন অতিমহান, কল্পনাতীত তার দানভাণ্ডার, তেমনি তাঁর দান ও পুরস্কারও হবে অকল্পনীয় ও অনুমান-অযোগ্য। সিয়াম সাধনায় মূলত বান্দারা আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্যের পারাকাষ্ঠা দেখান। আর ধৈর্য সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন : ‘নিঃসন্দেহে ধৈর্যশীলদের তাদের প্রতিদান হিসেব ছাড়া পূর্ণ করে দেওয়া হবে।’ (সূরা যুমার : ১০)

রোজা ঢালস্বরূপ

হাদিসে রোজাকে ঢালের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ঢাল যেমন আঘাত থেকে যোদ্ধার দেহকে সুরক্ষা দেয়, রোজাও তেমনি রোজাদারকে অনর্থক কথাবার্তা ও অশোভন কর্মকাণ্ড থেকে বাঁচায়। তাই মহানবী (সা.)-এর নির্দেশ : ‘তোমাদের কেউ সিয়াম দিবসে থাকলে সে যেন অশ্লীল ভাষায় কথা না বলে এবং চিৎকার করে বাক্যবিনিময় না করে। শুধু পার্থিব জীবনেই রোজা মানুষকে বাঁচায় না, পরকালেও বাঁচাবে। রাসূল (সা.) বলেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ, যার দ্বারা রোজা পালনকারী নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে পারে।’ (মুসনাদ আহমাদ)

রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর অতিপ্রিয়

হাদিসে আরো বলা হয়েছে, রোজা পালনকারীর মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধি অপেক্ষা প্রিয়। কারণ এ দুর্গন্ধ রোজার কারণে হয়। তাই তা আল্লাহর কাছে সুগন্ধি ও প্রিয় বলে বিবেচিত হয়। এটা আল্লাহর কাছে রোজার মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের প্রমাণ।

রোজাদারের দুই আনন্দ

রোজা পালনকারীর জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে। একটি ইফতারের সময়, অন্যটি আল্লাহর দিদার লাভের সময়। সারা দিন উপোস থাকার পর পানীয় ও নানান পুষ্টিকর খাবার সামনে এলে মনে এক ধরনের খুশির আভা ঝিলিক দিয়ে যায়। এটা হলো ইহকালের নগদ আনন্দ।

আর রোজাদারের আসল আনন্দ ও পরম প্রাপ্তি হবে জান্নাতে। যখন সেখানে মহান রবের দিদার নসিব হবে। স্বচক্ষে পরম ভালোবাসাময় স্রষ্টাকে যখন দেখবে রোজাদাররা। সুবহানাল্লাহ, হাদিসে এসেছে, আল্লাহকে দেখার পর জান্নাতিরা জান্নাতের এতসব অনির্বচনীয় ও অকল্পনীয় নেয়ামতের সুখের কথা মুহূর্তেই ভুলে যাবে। আপন রবকে দেখার আনন্দের কাছে মানব জন্মের যাবতীয় আনন্দ ও উপভোগ কিছুই মনে হবে না।