গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে আজ ঢাকায় 'মার্চ ফর গাজা'

বিশেষ প্রতিনিধি:

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে আজ ঢাকায় 'মার্চ ফর গাজা'

ঢাকা: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে তৌহিদী জনতার 'মার্চ ফর গাজা' কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। 'প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ'-এর উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানানো এবং ইসরায়েলের নৃশংসতার প্রতিবাদ করা হবে।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, দুপুর ৩টায় ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল নিয়ে সর্বস্তরের মানুষ এই র‌্যালিতে অংশ নেবেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন।

গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ও ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো গণহত্যার প্রতিবাদে এই র‌্যালি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরই মধ্যে এটি দেশব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গতকাল জুমার নামাজের খুতবায় প্রতিটি মসজিদ থেকে 'মার্চ ফর গাজা' র‌্যালিতে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

আয়োজকরা আশা করছেন, এই র‌্যালিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে বড় জমায়েত হবে। তাদের বিশ্বাস, দেশের রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক মহলসহ সব স্তরের মানুষ এই প্রথম এক প্ল্যাটফর্মে এসে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানাবেন।

বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), হেফাজতে ইসলামসহ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং আলেম-ওলামা এই কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন।

এই কর্মসূচিকে ঘিরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মেট্রোরেল স্টেশনটি বন্ধ রাখা হবে।

প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্টের পক্ষ থেকে ইসলামী বক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ, আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির হাসনাত আবদুল্লাহসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা দেশবাসীকে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, 'মার্চ ফর গাজা' কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শান্তিপূর্ণ র‌্যালি নিয়ে বেলা ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হবেন। দুপুর ২টায় মিছিলসহ পাঁচটি স্থান থেকে যাত্রা শুরু করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের তিনটি প্রবেশপথ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবেন। এই অনুষ্ঠানে বক্তব্যকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে না। বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় ঘোষণাপত্র পাঠ ও শপথ গ্রহণ করা হবে।

'মার্চ ফর গাজা' কর্মসূচিতে ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ তার ফেসবুক পেজে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, সব শ্রেণি-পেশা-দল-মতের মানুষের অংশগ্রহণে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিশাল গণজমায়েত হতে যাচ্ছে। তিনি সবাইকে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন ও পরীক্ষার কারণে কর্মসূচিটি প্রথমে শাহবাগ থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের দিকে হওয়ার কথা থাকলেও পরে স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। আয়োজকরা জানান, বিনিয়োগ সম্মেলনে আসা অতিথিদের সুবিধার জন্য এবং পদযাত্রা শেষে রাজপথের পরিবর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিস্তৃত পরিসরে অবস্থানের জন্য স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে।

কর্মসূচি সফল করার জন্য প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্টের ফেসবুক পেজ থেকে কয়েক দিন ধরে প্রচার চালানো হচ্ছে। কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে অনেক আলেম ও তারকার ভিডিও বার্তা পোস্ট করা হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, হেফাজতে ইসলামীর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদরীস নদভী ও মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, ফুরফুরা দরবার শরিফের পীর শাইখুল হাদিস আবু বকর আব্দুল হাই মিশকাত সিদ্দিকী, ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজ, নাহিদ রানা ও তাইজুল ইসলাম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের (বেফাক) সভাপতি ও গুলশান মসজিদের খতিব আল্লামা মাহমুদুল হাসানসহ আরো অনেকে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছেন।

মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী ভিডিও বার্তায় বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি নিজে উপস্থিত থাকবেন।

শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, শতাব্দীর এই বর্বরোচিত গণহত্যার বিরুদ্ধে তিনি দাঁড়াতে চান এবং এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার কথা জানিয়েছেন।

ফিলিস্তিন সলিডারিটি মুভমেন্টের মিডিয়া সমন্বয়ক শেখ ফজলুল করীম মারুফ জানান, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কর্মসূচি হতে যাচ্ছে। এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন একাত্মতা ঘোষণা করেছে এবং সবার অংশগ্রহণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জনসমুদ্রে পরিণত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তিনি আরও জানান, এটি একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হবে এবং সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এটি সফল করবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থলসহ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।

প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে মানুষ প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। এই ধারাবাহিকতায় প্যালেস্টাইন সলিডারিটির উদ্যোগে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

র‌্যালির স্টার্টিং পয়েন্টগুলো:

  • পয়েন্ট ১: বাংলামোটর থেকে মিছিল শুরু হয়ে শাহবাগ হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনা গেট দিয়ে প্রবেশ করবে।
  • পয়েন্ট ২: কাকরাইল মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়ে মৎস্য ভবন হয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করবে।
  • পয়েন্ট ৩: জিরো পয়েন্ট থেকে মিছিল শুরু হয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে টিএসসি গেট দিয়ে প্রবেশ করবে।
  • পয়েন্ট ৪: বখশীবাজার মোড় থেকে মিছিলসহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে টিএসসি গেট দিয়ে প্রবেশ করবে।
  • পয়েন্ট ৫: নীলক্ষেত মোড় থেকে মিছিলসহ ভিসি চত্বর হয়ে টিএসসি গেট দিয়ে প্রবেশ করবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, পরীক্ষার্থীদের জন্য সব রাস্তা খোলা থাকবে এবং তাদের হাতে সময় নিয়ে বের হতে অনুরোধ করা হয়েছে।